Islam and women

আরিফ বিল্লাহ

নিখিল সৃষ্টির অবিনশ্বর নিয়ন্তা সৃষ্টজীবকে বিভিন্ন শ্রেণি ও গোত্রে ভাগ করেছন। তার মধ্য থেকে একটি শ্রেনি হলো মানবজাতি। মানবজাতির রয়েছে দু'টি অংশ নর ও নারী। এ উভয়ের সমন্বয়ে আসে পূর্ণতা। নর ছাড়া যেমন নারী জীবনের সার্থকতা নেই তেমনি নারীর যথাযোগ্য ভূমিকা ছাড়া মানব সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষা করাই সম্ভব নয়।

কারণ লীলাপূর্ণ বৈচিত্রময় এ জগতের বহুমুখী প্রয়োজনীয়তা মেটাবার জন্য একই ধরনের দৈহিক ও মনন শক্তি যথেষ্ট নয়। তাই যে শ্রেনিকে যে প্রয়োজনের তাকীদে সৃষ্টি করা হয়েছে তাকে তদুপযোগী দৈহিক ও মানসিক যোগ্যতা দান করা হয়েছে। নর বা পুরুষের বৈশিষ্ট হচ্ছে শক্তি ও নেতৃত্ব। পক্ষান্তরে নারীর বৈশিষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্য ও সৃষ্টি। তাই পুরুষ আঞ্জাম দিবে বাহিরের কাজ। আর নারী আঞ্জাম দিবে ঘরের ভেতরের কাজ।

নারী জাতির উপর রয়েছে ইসলাম ধর্মের সীমাহীন দয়া ও অনুগ্রহ। ইসলাম নর বা পুরুষকে নারীর সাথে সদাচরণ এবং প্রেমময়ী আচরনের শিক্ষা দিয়েছে। সমাজ ও সভ্যতার কাজে এটাই ছিল কাম্য যে, পুরুষ তার শক্তি ও নেতৃত্ব দ্বারা নারীকে সুরক্ষা দান করবে এবং নারীর প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করবে। ইসলামের পূর্বে কোনো ধর্ম, সমাজ ও সভ্যতা নারীকে তার যথাযোগ্য মর্যাদার আসনটি দান করেনি। সৃষ্টির ক্ষেত্রে নারীর যে গৌরবময় ভূমিকা তারও যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করেনি।

ইসলাম আসার পূর্বে বিভিন্ন সম্প্রদায় নারী জাতিকে নিকৃষ্ট সৃষ্টি মনে করতো। আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গি, আইনি অধিকার ও সামাজিকভাবে সর্বক্ষেত্রে নারী জাতিকে নিচু শ্রেনির সামগ্রী মনে করা হতো। নিষ্পাপ-সতীত্বের কোনো ধারণাই ছিল না। কোনো কোনো সভ্যতায় নারীর অবস্থান সেবাদাসীর চেয়ে বেশি কিছু ছিলো না। খুব বেশি হলে বিভিন্ন ছলনার আশ্রয় নিয়ে নারীকে ভোগের সামগ্রীরূপে ব্যবহার করা হতো। কোনো কোনো ধর্মে নারীকে পাপ, ঘৃণাৎও সমাজে লজ্জার কারণ মনে করা হতো। এমন কি নারী বলে কোনো আত্মা বা প্রান আছে কিনা তা নিয়ে হতো ধর্মীয় বিতর্ক।

ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা নারীকে দিয়েছে তার যথাযোগ্য মর্যাদা ও সম্মানের আসন, পূর্ণ অধিকার ও যথাযথ মূল্যায়ন। আমল ও ইবাদতের ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করেছে ইসলাম। এমন কি যে কোনো নারী আমলের মাধ্যমে পুরুষকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।

পিতৃত্বের চেয়ে মাতৃত্বের মর্যাদাকে ইসলাম অনেক উচ্চে নির্ধারন করেছ এবং এটা একমাত্র ইসলামেরই গৌরব।

নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো কে আমার সদাচারের অধিক হকদার? তিনি বললেন, "তোমার মা"। এভাবে তিনবার প্রশ্ন করা হলো আর বার বার একই উত্তর দেওয়া হলো। চতুর্থবারের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন তোমার বাবা।

বোখারী ৫৯৭১. মুসলিম ২৫৪৮

ইসলাম এসে নারীর সাথে সদাচরনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন-

وعاشروهن بالمعروف فإن كرهتموهن نسى أن تكرهوا شيئا ويجعل الله فيه خير الكثيرا

অর্থ: আর তাদের সাথে সদ্ভাবে জীবন যাপন কর। তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এর সথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে যে, তোমরা কোনও জিনিসকে অপছন্দ করছ অথচ আল্লাহ তাতে প্রভূত কল্যাণ নিহিত রেখেছেন। সূরা নিসা, আয়াত-১৯

নারীকে উৎসাহ দিয়ে ইসলাম বলে পুরুষের ন্যায় একজন নারীও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধনে সক্ষম পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়

للرجال نصيب لما اكسبوا أو للنساء نصيب مما اكتسبن

অর্থঃ- পুরুষ যা অর্জন করে তাতে তার অংশ থাকবে এবং নারী যা অর্জন করে তাতে তার অংশ থাকবে।

কতিপয় নারী আকাঙ্খা ব্যক্ত করেছিল, তারা যদি পুরুষ হত, তবে তারাও জিহাদ ইত্যাদিতে অংশগ্রহন করে অধিক সওয়াব অর্জনে সক্ষম-হত। আল্লাহ জানিয়ে দিলেন যে ব্যক্তি যেমন কাজ করবে, তার ক্ষেত্রে তেমনই ফল প্রকাশ পাবে। তাতে নর ও নারীর মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।

যেখানে ইসলামের পূর্বে নারীর আত্মা আছে কিনা এ নিয়ে মানুষ তর্ক করত সেখানে ইসলাম মায়ের সাথে সদাচরনের নির্দেশ দিয়ে মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত। মায়ের অবাধ্যতা মারাত্মক গোনাহ এমন কি কাফের-মুশরিক মায়ের সাথেও সদাচরণ ও সেবার গুরুত্বের ঘোষনা দেয়।

কন্যাদেরকে জীবন্ত পুঁতে রাখার পরিবর্তে কন্যাদের সাথে সদাচরনের নির্দেশ দিয়ে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

من عال جاريتين حتى تبلغا جاء يوم القيامة وهو كهاتين وضم اصابعه .

অর্থঃ যে ব্যক্তি ২ কন্যাকে প্রাপ্ত বয়ষ্কা হওয়া পর্যন্ত উত্তমরূপে লালন-পালন করল সে আর আমি কেয়ামত দিবসে এই দুই আঙ্গুলের ন্যায় থাকব। অতপর নবীজি তার আঙ্গুলদ্বয় একত্রিত করলেন।

নবীজি আরও বলেন কন্যা দোযখ হতে মুক্তি দিবে। বন্যা সন্তানকে উত্তমভাবে প্রতিপালনকারীর জন্য রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ এবং কন্যার সাথে পুত্রের ন্যায় আচরনকারীর জন্য রয়েছে মহান প্রতিদান।

যেখানে ইসলামের পূর্বে নারীকে মনে করা হতো ভোগসামগ্ৰী সেখানে ইলাম নারীর সাথে সদাচারণ, নেক স্ত্রী সবচেমে বড় নেয়ামত সর্বোত্তম মানবের মাপকাঠি কিংবা নিদর্শন হলো আপন স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরন ও ভালো ব্যবহার করা। তাদের অধিকার সযত্নে প্রদান করার নির্দেশ দিয়েছে। বিনা দোষে স্ত্রী বিমুখ হওয়া স্বামীর জন্য উচিৎ নয় এতসব আধকার ইসলাম পূর্ব-কোনো ধর্মই নারীকে দেয়নি। কেবল ইসলাম নারীকে দিয়েছে এসকল সম্মানজনক অধিকার, গুরুত্ব। সমাজ ও মূল্যায়ন।

-হাদিস শরীফে রসূল বলেন-

الدنيا كلها متاع وخير متاع الدنيا المرأة الصالحة .

অর্থ: দুনিয়ার সবকিছু সম্পদ আর দুনিয়ার সবচেসে উত্তম সম্পদ হলো নেক স্ত্রী।

মহিলাদেরকে এমন সম্মান কেবল ইসলামই দিয়েছে যে তাদেরকে দুনিয়ার সব সম্পদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিলেছেন। দুনিয়ার অন্য কোনো ধর্ম নারীকে এমন সম্মান দেয়নি।

বিশ্ব দেখেছে ইতিহাস সাক্ষী যেখানে কন্যা জন্ম দেওয়াকে বাবা লজ্জার কারণ মনে করত সেখানে ইসলাম কন্যা প্রতিপালনের ফযীলত বর্ণনা করে বাবাকে খুশি করলেন, জান্নাতের সু-সংবাদ দিলেন আর নারীকে সমাজের নিম্ন শ্রেনি থেকে উচ্চশ্রেনিতে উন্নিত করলেন।

নারীর মর্যাদাকে এমন উন্নত স্তরে পৌঁছে দিয়েছে ইসলাম যে কোনো পুরুষ যদি কোনো নারীকে স্ত্রী বানাতে চায় তাহলে নিজের মনের চাহিদা মতো ইচ্ছা করলেই বানাতে পারবে না বরং আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন - "أن تبتغوا بأحد الكم "তোমরা তাদেরকে স্ত্রীর, মার্যাদা তো দিবেই সাথে সাথে তাদের কাছে যাওয়ার জন্য শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত ফীও দিবে।

কোনো পুরুষ যখন একাধিক বিবাহ করে তখনও ইসলাম নারীর দিকে লক্ষ্য রেখে পুরুষকে আদেশ করছে তোমরা একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সমতা বিধান কর। কারণ হতে পারে পুরুষ তার কেবলমাত্র তার নতুন স্ত্রী কিংবা অল্প বয়সকা অথবা বেশি সুন্দরী রূপবতী স্ত্রীকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে। এতে করে অপর স্ত্রীর কষ্ট হবে। তাই ইসলাম অপর স্ত্রীর দুঃখ-কষ্টের দিকে লক্ষ্য রেখে স্বামীকে তাদের মাঝে সমতা বিধানের নির্দেশ দিয়ে নারীকে এমন মর্যাদ এমন মযান দান করেছে যা পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম, সমাজ বা সভ্যতা দান করেনি।

অতএব একথা মিথ্যার কোনো অবকাশ রাখে না যে ইসলাম নারীকে পুরুষের সম্মান চেয়ে কোনো অংশে মর্যাদা কম দিয়েছে। বরং দেখা যায় ইসলাম নারীকে সমান মর্যাদা তো দিয়েছেই কখনো কখনো কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইসলাম নারীকে বেশি মর্যাদাও দিয়েছে। যা পৃথিবীতে অন্য কোন ধর্ম দেয়নি এবং দেওয়ার কল্পনাও করেনি। ইসলাম কেবল নারীকে তার মর্যাদা দেয়নি বরং নারীর মর্যাদায় পূর্ণতা দিয়েছে।

সেখানে ইসলামের পূর্বে নারী জাতিকে মানুষই মনে করা হতো না সেখানে ইসলামের নবী, যিনি সকল নবী রাসূলের সর্দার হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহ আলাহাই ওয়াসাল্লাম নারী জাতিকে "প্রিয় "বলে আখ্যা দিলেছেন। নারীর জন্য এর চেয়ে বড় আর কি হতে পারে?

ইসলামের নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনো পুরুষ যখন স্ত্রী গ্ৰহন করে তখন তার অর্ধেক ঈমান (ধর্ম) পূর্ণ হয়। অতঃপর বাকী অর্ধেক ঈমান (ধর্ম) রক্ষার জন্য আল্লাহকে ভয় করা দরকার। কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন নারীরা তোমাদের পোষাক-পরিচ্ছদ এবং তোমরাও নারীদের পোষাক-পরিচ্ছদ। এখানেও ইসলাম নারীকে প্রেম, ভালবাসা ও পবিত্রতা রক্ষায় পুরুষের সমান মর্যাদা দান করেছে।

বিভিন্ন ধর্মে পাদ্রীরা যখন এ নিয়ে আলোচনা সভায় বসল যে নারীরা মানুষজাতীর অন্তর্ভুক্ত হবে কি না তখন ইসলাম নারীদের মর্যাদা রক্ষার্থে ভাদের উত্তরে বলছে-

যেহেতু হযরত আদম (আ.) এর পাজর থেকে মা হাওয়া (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়েছে সেহেতু আদম বা তার ছেলেরা মানুষ হতে পারলে আদমের শরীরের অংশ হয়ে মা হাওয়া ও তার মেয়েরা কেন মানুষ হবে না? এভাবে ইসলাম নারীর সম্মান রক্ষা করেছে। আল্লাহর পক্ষ থেকে কুরআনে এবং নবীজির পক্ষ থেকে হাদিস শরীফে ঈমানদার ও পূণ্যবতী নারীদের বহু প্রশংসা ও তাদের জান্নাত লাভের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।

এভাবে ইসলাম একজন নারীকে এমন মর্যাদায় উন্নিত করেছে যা পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্ম করেনি। এরপরও যদি কোনো ব্যক্তি ইসলাম নারীকে কি দিল এ নিয়ে আপত্তি করে তাহলে তার নির্বুদ্ধিতা প্রমানের জন্য এমন একটি আপত্তিই যথেষ্ট।

-ফযীলত

জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া ঢাকা

আরও পড়ুন...

0 মন্তব্য রয়েছে

একটি মন্তব্য করুন

চিন্তা করবেন না! আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না।

জনপ্রিয় ব্লগ

বিভাগ

সর্বশেষ ব্লগ