Hadith

মিজানুর রহমান

বয়স পাঁচ ছয় হবে। মা বাবার আগ্রহ মাদ্রাসায় পড়াবেন। দুনিয়ার অনেক স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে ভর্তি করিয়ে দিলেন। শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পৌঁছলাম। ইলমী কিতাবাদির সাথে কিছুটা মোনাসাবাত হলো। সরফ, নাহু, বালাগাত কিছুটা হলেও বুঝতে শুরু করলাম। আমার সামনে আমার বড় মাকসাদ; আমার সম্পর্ক হবে আল্লাহর সাথে। পেয়ারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসার পাত্র হবো আমি। ভালোভাবে পড়াশোনা করে হাদিসে নববীর বিশাল সমুদ্রে অবগাহন করবো। নিজেকে আলোকিত করবো তাঁর নূরে। চেষ্টা চালিয়ে যাব অবিরাম। আমি মিলিত হবো ওয়াবিহি ক্বালা হাদ্দাসানা" এর সুরের মিছিলে। আমার সামনে উন্মোচিত হবে হাদিসের নববীর একেকটি অধ্যায়। এক একটি হাদিস আমার জিন্দেগির গান্দেগীকে দূরে সরিয়ে দেবে‌। আমিও শামিল হতে চাই আলোকিত মানুষের দলে। এটাই তো আমার চাওয়া-পাওয়া। এটাই আমার স্বপ্ন, আমার বাসনা। এভাবে কত স্বপ্ন লালন করি মনের গহীনে, আমার হৃদয়-মন্দিরে। দিন গড়িয়ে রাত সপ্তাহ গড়িয়ে মাস চলতেই থাকে। পার হলো জীবনের কয়েক বসন্ত। পৌছালাম আমার কাঙ্ক্ষিত সময়ে‌। সেই সময়টার জন্য আমার পুরো জিন্দেগীর মেহনত মোজাহাদা। চেষ্টা-সাধনা এই সময়ে পৌঁছতে পারাই তো ছিল আমার জিন্দেগির বড় তামান্না। আমি এখন হাদিসে নববীর এক নগণ্য তালিব।

ফিকির করি জীবনকে কীভাবে আরো আলোকিত করবো? হাদিসে নববীতে নূরে যেই আসুক, এর আলোয় আলোকিত হওয়া ছাড়া ফিরে যেতে পারে না। জীবন চমকায় সেই আলোয়। আর কেনই বা হবে না? এটাতো পেয়ারে হাবীবের মুখনিঃসৃত বাণী। বড় আনন্দিত হই। দিল থেকে মালিকের শুকরিয়া আদায় করি এই মিছিলে শরীক হতে পেরে।

জীবনের এক একটি দিক ফুটে ওঠে হাদিসের নববীর আলোতে। আমি কেমন হবো? আমার চরিত্র কেমন হওয়া উচিত? একাকী জীবনে আমার চিত্রটা কি? পারিবারিক জীবনে আমি সফল হবো কিভাবে? সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে আমার পদচারণা কেমন হবে?, সবকিছুই চিত্রিত হয়েছে তাঁর হাদিসে নববীতে। আমি আবেগাপ্লুত হয়ে ভাবি, তাঁর জীবনটা কতইনা সুন্দর। কত মায়াবী তাঁর আচরণ। কত কোমলতা, চাল-চলন, নম্রতা, স্বভাব চরিত্র এ সবই আমি পরম যত্নে সংরক্ষিত পাই হাদিসের পাতায় পাতায়। কাছের বা দূরের সবাই তাকে ভালোবাসতো। তাকে দেখে ক্ষুধার্তরা ক্ষুধার কথা ভুলে যেত। পিপাসার্তরা তাকে দেখেই তৃষ্ণা নিবারণ করত। কাতর হয়ে পড়ে থাকতো মসজিদে নববীর কোণে। পেটে খাদ্য নেই, গায়ে সুন্দর জামা নেই, এরপরেও সুফফার সেই প্রাঙ্গণ ছেড়ে যেতে মন সায় দিতো না তাদের। না খেয়ে এখানে পড়ে থাকাটাই বুঝি বড় সফলতা, বড় সৌভাগ্য। মাঝে মাঝে শরীর কেঁপে ওঠতো। কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে পড়তেন মসজিদে নববীর সোনালী প্রাঙ্গনে। অসুস্থ মনে করে পা দিয়ে পাড়ান অনেকে। কিন্তু তিনি যে অসুস্থ না‌। ক্ষুদার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এটা আর কয়জনেই বা বুঝতে পারে‌। তিনি তো এখানে পড়ে রয়েছেন পেয়ারা নবীর বাণী শুনতে। হাদিস সংরক্ষণকারীদের কাতারে নিজেকে শামিল করে নিতে। এক নজর হলেও তাকে দেখে মন জুড়াবে। এগুলো তো আমি খুঁজে পাই হাদিসের বিশাল ভান্ডারে।

প্রতিটা লাইনে শিক্ষা। প্রতিটি বাক্যে উপদেশ। আহ! যদি সব নিতে পারতাম। আমার হৃদয়ে মজা আসে। তরঙ্গায়িত হয় আমার মন। আবেগের দরিয়ায় হাবুডুবু খেতে থাকি সারাক্ষণ। ভাবি যদি জীবনটা হাদিসের আলোকে সাজাতে পারতাম, তাহলে এই জগত সংসারে আমিও একজন আলোকিত মানুষ হতাম। মিলিত হতাম আলো বিতরণকারীদের দলে। হাদিস তো মুমিনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাদিস ছাড়া যে সফলতার কথা ভাবে সে নিশ্চিত পদস্খলিত ও ভ্রষ্ট। হাদিস ছাড়া যেমন ভালোভাবে বোঝা যাবে না কোরআন, তেমন পালন করা যাবে না কোন বিধি-বিধান। হাদিসের উপর আমল করার মানেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সন্তুষ্টির পথে এগিয়ে যাওয়া। আর রাসুলের সন্তুষ্টি তো আল্লাহরই সন্তুষ্টি, যা প্রতিটি মুমিনের তামান্না, কামনা ও বাসনা।

-তাকমীল

জামিয়াতুল উলুমুন ইসলামীয়া ঢাকা

আরও পড়ুন...

0 মন্তব্য রয়েছে

একটি মন্তব্য করুন

চিন্তা করবেন না! আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না।

জনপ্রিয় ব্লগ

বিভাগ

সর্বশেষ ব্লগ