গণতন্ত্রের মোহে ইসলামি চেতনার অবক্ষয়
ঢাকায় যাচ্ছিলাম, গন্তব্য ইলম, আমল ও আরবি সাহিত্যের মারকাজ জামীতুর উস্তাদ শহীদুল্লাহ্ ফজলুল বারী (রাহি), পথে মধ্যে হঠাৎ মনে হলো—এই সফরে একটি বই পড়ে শেষ করা যাক। যে ভাবনা, সেই কাজ। হাতে নিলাম মাওলানা আবু মুসআব সাহেবের অসাধারণ গ্রন্থ “মুসলিম বিশ্ব ও সমকালীন মাসায়েল”। বইটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি দলিলসমৃদ্ধ। এক কথায় অনন্য
ইসলাম ও গণতন্ত্র” বিষয়ে একটি প্রবন্ধ সামনে এলো। বিষয়টি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি সময়োপযোগীও বটে। তাই স্বাভাবিকভাবেই গভীর মনোযোগ দিয়েই পড়তে শুরু করলাম। কিন্তু যতই পড়ছি, ততই বিস্মিত হচ্ছি! আমাদের আকাবিরে দেওবন্দ কী গভীর দৃষ্টিতে বিষয়টি নিয়ে ভেবেছেন—তা সত্যিই চিন্তার খোরাক। গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলামি খেলাফাহ কায়েমের প্রসঙ্গে তাঁদের চিন্তা-চেতনা ছিল কতটা প্রখর, যুক্তিনির্ভর ও বাস্তবসম্মত—তা উপলব্ধি করলে মুগ্ধ হতে হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ আমরা নিজেদের তাঁদের যোগ্য অনুসারী বলে দাবি করি, মুখে বলি তাঁদের দেখানো পথেই চলছি—কিন্তু বাস্তবে কতটা অনুসরণ করছি তাই দেখার বিষয়।
আর যখনই গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ আসে, তখন অনেকের মাথায় যেন আসমান ভেঙে পড়ে! তখন তারা নানা অপব্যাখ্যা, ভুল যুক্তি, এমনকি ব্যক্তিগত আক্রমণ পর্যন্ত দেখা যায়। অথচ এঁরাই দিনরাত আকাবিরে দেওবন্দের কিতাব, রচনা ও ফতওয়া পাঠ করে থাকেন—কিন্তু এ বিষয়ে আকাবিরদের সুস্পষ্ট অবস্থান কখনো পড়েন না, আর পড়লেও না পড়ারেই ভান করেন।
আর যদি কেউ সাহস করে এ বিষয়ে কথা বলে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে নানা ট্যাগ ও অপবাদে আঘাত করা হয়, দেওয়া হয় তাকে নানারকম লকব যেমন খারেজি, মানহাজি উগ্রপন্থী ইত্যাদি ইত্যাদি।
হায় আফসোস ! কবে জাগ্রত হবে আমাদের এ ঘুমন্ত বিবেক? কবে আমরা সত্যকে তার আসল রূপে দেখতে ও গ্রহণ করতে শিখব? কবে? আর কবে?
চলুন দেখে আসি এ বিষয়ে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ কী বলেছেন, তাঁরা গণতন্ত্র ও ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থাকে কীভাবে দেখেছেন –বুঝেছেন। পাঠকের সুবিধার্থে বিষয়টি পর্যায়ক্রমে, দলিল–প্রমাণসহ তুলে ধরা হচ্ছে।
১/ প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক জামিয়া বানুরি টাউনের শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতি নিজামুদ্দিন শামযী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বক্তব্য, কী বলেছেন তিনি এ বিষয়ে
শায়েখ (রাহিমাহুল্লাহ) কে এ বিষয়ে কেউ একজন প্রশ্ন
করলে, শায়েখ তার প্রতি উত্তরে বলেন...
بنیاد پرستی کیا ہے ؟). اڑتالیس (۴۸) سال علماء نے انتخابی اور جمہوری سیاست میں ضائع کئے میں دعویٰ سے کہتا ہوں ........ کہ اس طرز حکومت سے اڑتالیس (۴۸) ہزار سال میں بھی اسلام نہیں آئے گا۔
جمہوریت ایک طرز حکومت ہے کہ جس میں : بقول اقبال !
جمہوریت ایک طرز حکومت ہے کہ جس میں + بندوں کو گنا کرتے ہیں تولا نہیں کرتے۔
لہذا اس طرز عمل پر محنت نہ کرے بلکہ نو جوانوں پر محنت کریں ....... ان کا ذہن بنائیں، امریکہ اور یہودی منصو بے انہیں بتا دیں اور پہلے خود اس کو سمجھے (خطبات شامزی، علماء کرام اور ان کی ذمہ داریاں (۲۰۴-۲۰۳/۱
..... নির্বাচন পদ্ধতি ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে উলামায়ে কেরাম আটচল্লিশটি বছর নষ্ট করেছে।..... আমি জোরদাবি করে বলছি..... এই ব্যবস্থাপনায় আটচল্লিশ হাজার বছরেও ইসলাম আসবে না।"
কবি ইকবালের কথা অনুযায়ী; গণতন্ত্র এমন একটি শাসনব্যবস্থা, যাতে মানুষদেরকে গণনা করা হয় কিন্তু মাপা হয় না।
সুতরাং এ কর্মপন্থায় শ্রম ব্যয় না করে তরুণদের নিয়ে মেহনত করুন।..... তাদের মানসিকতা তৈরি করুন। মার্কিন ও ইহুদি অভিসন্ধি তাদের বুঝিয়ে দিন।..... প্রথমে নিজেও বিষয়টি বুঝে নিন।" (খুতুবাতে শামেযি, ১/২০৩-২০৪)
তিনি আরো বলেন...
دنیا میں اللہ تبارک و تعالیٰ کا دین ووٹ کے ذریعے سے ، مغربی جمہوریت کے ذریعے سے غالب نہیں ہو گا، اس لئے کہ اس دنیا کے اندر اللہ کے دشمنوں کی اکثریت ہے، فساق و فجار کی اکثریت ہے، اور جمہوریت جو ہے وه بندوں کو گننے کا نام ہے تو لنے کا نہیں ...... دنیا میں جب بھی اسلام غالب ہو گا تو اس کا واحد راستہ وہی ہے جو راستہ اللہ کے نبی صلی اللہ علیہ وسلم نے اختیار کیا تھا اور وہ جہاد کا راستہ ہے۔ (ماہ نامہ سنابل کراچی، مئی ۲۰۱۳ء ۳۴-۳۳۸، شمارہ نمبر ۱۱، بحوالہ ادیان کی جنگ، ص ۵۸)
“আল্লাহ তাআলার দ্বীন পৃথিবীতে ভোটের মাধ্যমে, পশ্চিমা গণতন্ত্রের মাধ্যমে বিজয় লাভ করতে পারবে না। কেননা পৃথিবীতে ফাসেক-ফাজের দুষ্টমতি ও দুশমনদের আধিক্যতা। আর গণতন্ত্র হচ্ছে মানুষদেরকে গণনা করার নাম, মাপার নাম নয়।.... পৃথিবীতে ইসলামকে বিজয়ী করার একমাত্র রাস্তা হচ্ছে, যেটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গ্রহণ করেছেন। আর তা হচ্ছে জিহাদ-কিতালের ও দাওয়াহর রাস্তা।
(মাহনামা সানাবেল করাচি, মে ২০১৩, ৮/৩৩-৩৪, নং ১১, সূত্রে আদইয়ান কি জঙ্গ, পৃ: ৫৮)
২/ শাইখুল হাদিস আল্লামা সালিমুল্লাহ খান (রহিঃ) (মৃ-১৪৩৮ হি.)
শাইখুল হাদিস মাওলানা সালিমুল্লাহ খান রহ.কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো;
کیا انتخابی سیاسی نظام یا جمہوری نظم کے تحت اسلامی نظام کا نفاذ ممکن ہے ؟"
"নির্বাচন পদ্ধতিতে বা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার অধীনে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার বাস্তবায়ন কি সম্ভব?"
তিনি উত্তরে বলেছিলেন-
نہیں ایسا ممکن نہیں ہے۔ نہ انتخابات کے ذریعے اسلام لایا جا سکتا ہے، نہ جمہوریت کے ذریعے اسلام لایا جا سکتا ہے۔ جمہوریت میں کثرت رائے کا اعتبار ہوتا ہے اور اکثریت جہلاء کی ہے جو دین کی اہمیت سے واقف نہیں۔ ان سے کوئی توقع نہیں ہے۔ (ماہ نامہ سنابل کراچی، مئی ۲۰۱۳ء ، جلد ۸، شمارہ نمبر ۱۱، سرورق، بحوالۂہ ادیان کی جنگ، ص۵۸)
"না! এটি সম্ভব নয়। নির্বাচনের মাধ্যমেও ইসলাম আনা যাবে না এবং গণতন্ত্রের মাধ্যমেও ইসলাম আনা যাবে না। গণতন্ত্রে রায়ের আধিক্যতার বিবেচনা করা হয়। আর আধিক্যতা হচ্ছে মূর্খদের, যারা দ্বীনের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে অবগত নয়। তাদের কাছে কিছু আশা করা যায় না।" (মাহনামা সানাবেল করাচি, মে ২০১৩, খ: ৮, নং ১১, সূত্রে আদইয়ান কি জঙ্গ, পৃ: ৫৮)
এ প্রসঙ্গে আরও বহু আকাবিরে উলামায়ে দেলবন্দের তিক্ত অভিজ্ঞতা ও মন্তব্য রয়েছে, যা লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। তাঁর মধ্যে অন্যমত শহীদ আল্লামা ইউসুফ লুধিয়ানবি (রাহিমাহুল্লাহ) ও মুফতি রশিদ আহমদ লুধিয়ানবি (রাহিমাহুল্লাহ)
আল্লামা ইউসুফ লুধিয়ানবি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন
اب رہا آخری سوال کہ ملک وملت اور دین و مذہب کے حق میں یہ انتخاب کس حد تک مفید اور بار آور ہوں گے ؟ اس کا فیصلہ تو مستقبل ہی کریگا۔ لیکن گذشتہ تجربات اور موجودہ حالات پر نظر ڈالی جائے تو ایسا محسوس ہو ہے کہ ان انتخابات سے (سوائے تبدیلی اقتدار کے خوش کن توقعات وابستہ نہیں کی جاتیں۔ آپ را مسائل اور ان کا حل ، سیاست ، ۸/ ۱۸۴)
'এখন আছে শেষ প্রশ্নটি; দেশ ও জাতি এবং দ্বীন ও ধর্মের ক্ষেত্রে এই নির্বাচন কতোটা উপকারী ও ফলদায়ক? এটির ফয়সালা তো ভবিষ্যতই করবে। কিন্তু বিগত অভিজ্ঞতা ও বর্তমান অবস্থার উপর যদি দৃষ্টিপাত করা হয় তাহলে এটিই অনুভূত হয় যে, এ সকল নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল ছাড়া কাঙ্খিত কোনো কিছু আশা করা যায় না।" (আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল, ৮/১৮৪)
অন্যত্রে তিনি আরো বলেন....
(جمہوریت اس دور کا صنم اکبر ... جمہوریت دور جدید کاوہ صنم اکبر " ہے جس کی پرستش اول اول دانا یان مغرب نے شروع کی، چونکہ وہ آسمانی ہدایت سے محروم تھے اس لئے ان کی عقل نارسا نے دیگر نظام ہائے حکومت کے مقابلہ میں جمہوریت کا بت تراش لیا اور پھر اس کو مثالی طرز حکومت قرار دے کر اس کا صور اس بلند آہنگی سے پھونکا کہ پوری دنیا میں اس کا غلغلہ بلند ہوا یہاں تک کہ مسلمانوں نے بھی تقلید مغرب میں جمہوریت کی مالا چینی شروع کر دی، کبھی یہ نعرہ بلند کیا گیا کہ " اسلام جمہوریت کا علمبر دار ہے " اور کبھی " اسلامی جمہوریت" کی اصطلاح وضع کی گئی، حالانکہ مغرب جمہوریت کے جس بت کا پجاری ہے اس کا نہ صرف یہ کہ اسلام سے کوئی تعلق نہیں بلکہ وہ اسلام کے سیاسی نظریہ کی ضد ہے، اس لئے اسلام کے ساتھ جمہوریت کا پیوند لگانا اور جمہوریت کو مشرف بہ اسلام کرنا صریحاً غلط ہے۔ (آپ کے مسائل اور ان کا حل ، سیاست ، ۸ / ۱۹۰)
"(গণতন্ত্র সাম্প্রতিককালের বড়ো মূর্তি)..... গণতন্ত্র সাম্প্রতিককালের ওই 'বড়ো মূর্তি' যার পূজা প্রথম প্রথম পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীরা শুরু করেছিলো।
যেহেতু তারা আসমানি হেদায়াত থেকে বঞ্চিত ছিলো, তাই তাদের অকৃতকার্য মেধা অন্যান্য রাষ্ট্রব্যবস্থার মোকাবেলায় গণতন্ত্রের মূর্তির আকৃতি গঠন করলো। অতঃপর সেটিকে আদর্শ রাষ্ট্রব্যবস্থা আখ্যা দিয়ে সেটির শিঙ্গা এতো উঁচু আওয়াজে ফুৎকার দিয়েছে যে, পুরো বিশ্বে তার ধুমধাম পড়ে গেছে। এমনকি মুসলমানরাও পাশ্চাত্যের অনুসরণে গণতন্ত্রের মালা পরতে শুরু করেছে। কখনো 'ইসলাম গণতন্ত্রের ঝাণ্ডাবাহী' শ্লোগান দিয়েছে, আবার কখনো 'ইসলামি গণতন্ত্র' পরিভাষা আবিষ্কার করেছে। অথচ পশ্চিমা বিশ্ব যে গণতন্ত্রের মূর্তিপূজারি তা শুধু এতোটুকু নয় যে ইসলামের সঙ্গে সেটির কোনো সম্পর্ক নেই, বরং তা ইসলামি রাষ্ট্রনীতির বিপরীত। এ জন্য ইসলামের সঙ্গে গণতন্ত্রের জোড়া লাগানো এবং গণতন্ত্রকে মুসলমান বানানো সুস্পষ্ট ভুল।” (আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল, ৮/১৯০)
মুফতি রশিদ আহমাদ লুধিয়ানবি (রাহিমাহুল তার রচিত আহসানুল ফতোয়াতে বলেন...
حیرت تو ان حضرات پر ہے جو یہ دعویٰ کرتے ہیں۔ " موجودہ سیاست میں حصہ لینے سے ہمارا مقصود ملک میں صحیح اسلامی نظام قائم کرنا ہے "
مگر پھر بھی وہ سیاسی کاموں میں احکام اسلام کی پروا نہیں کرتے، غیر مشروع تدابیر اختیار کرتے ہیں، جب ان سے کہا جاتا ہے اپ تواسلامی نظام قائم کرنے کے مدعی ہیں مگر آپ خود اسلام نافذ کرنے کے لئے جو طریقے اختیار کر رہے ہیں غیر اسلامی اور نا جائز ہے "
جواب دیتے ہیں:
اگرچہ یہ طریقے نا جائز ہیں مگر ان کے بغیر اسلام لانا ممکن نہیں ، اس لئے اب تو جائز نا جائز کی پروا کئے بغیر اقتدار حاصل کرنے کی جد و جہد لازم ہے ، اقتدار حاصل ہو جانے کے بعد پورے طور پر اسلام نافذ کر دیں گے "
محض دھوکہ ہے، ہمیں ان کی نیت پر شبہ نہیں، مگر انکا طریق کار ایسا ہے کہ اس سے نفاذ اسلام کی توقع ہرگز
نہیں کی جاسکتی، کیونکہ غیر اسلامی طریقوں سے بے دینوں کی کامیابی تو ممکن ہے مگر دینداروں کو اولاً تو کامیابی کی نہیں، اور اگر صورت کامیابی ہو بھی گی تو سکے نتیجہ میں سلام نہیں آئے گا کہ اسلام کےنام کاکوئی اور چیز ہوگی، اور صورۃ جو کامیابی ہو گی وہ بھی چند روز سے آگے نہ بڑھے گی، جب اس کی بنیادی کمزور تھی تو اس پر شارت کیسے قائم رہ سکتی ہے ؟ (احسن الفتاوی، کتاب الجہاد، ۲ / ۴۳)
"আফসোস তো হয় ওই সকল ব্যক্তিত্বের ব্যাপারে যারা দাবি করে, 'প্রচলিত রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে সহিহ ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।' অথচ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তারা ইসলামি বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা করে না এবং শরিআত পরিপন্থী কৌশল অবলম্বন করে।
যখন তাদেরকে বলা হয়; আপনারা তো ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার দাবিদার। কিন্তু আপনারা ইসলাম বাস্তবায়নের জন্য যে পন্থা অবলম্বন করছেন, তা তো অনৈসলামিক এবং নাজায়েয।
তখন তারা প্রতিউত্তরে বলে, 'যদিও এ পদ্ধতি নাজায়েয, কিন্তু তা ব্যতীত ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এজন্য এখন তো জায়েয-নাজায়েযের তোয়াক্কা না করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা আবশ্যক। ক্ষমতা অর্জিত হলে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম বাস্তবায়ন করবো।
এটি ধোঁকা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের নিয়তের ব্যাপারে আমরা সন্দেহ করছি না; কিন্তু তাদের কর্মপদ্ধতি এমন, যার মাধ্যমে কখনই ইসলাম বাস্তবায়নের আশা করা যায় না। কেননা অনৈসলামিক পদ্ধতিতে দ্বীনহীনদের জন্য তো সফলতা অর্জন করা সম্ভব, কিন্তু দ্বীনদারদের জন্য প্রথমত সফলতা অর্জন করাই সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে জামিয়া আশরাফিয়া লাহোরের প্রধান মুফতি আল্লামা হামিদুল্লাহ জান (রাহিমাহুল্লাহ) আরো বলেন...
اور ووٹ کا استعمال مغربی جمہوری نظام کو عملاً تسلیم کرنا اور اس کی تمام خرابیوں میں حصہ دار بنا ہے ، اس لئے موجودہ مغربی جمہوری نظام کے تحت ووٹ کا استعمال شرعاً نا جائز ہے۔ (ماہ نامہ سنابل کراچی، مئی ۲۰۱۳ء،
۳۲/۸، شمارہ نمبر ۱۱، بحوالۂ ادیان کی جنگ، ص۵۶)
"ভোটের ব্যবহার মূলত পশ্চিমা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে কার্যত মেনে নেয়া এবং সেটির সকল অন্যায়ের অংশীদার হওয়াকে সাব্যস্ত করে। এজন্য প্রচলিত পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার অধীনে ভোটের ব্যবহার শরিআতের দৃষ্টিতে জায়েয নয়।” (মাহনামা সানাবেল করাচি, মে ২০১৩, ৮/৩২, নং ১১, সূত্রে আদইয়ান কি জঙ্গ, পৃ: ৫৬)
মুফতি হামিদুল্লাহ জান রহ. এর পূর্বোল্লিখিত বক্তবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের অনুবাদ উল্লেখ করছি।
তিনি বলেন, কেউ বলবে ভোট আমানত, কেউ বলবে ভোট ওকালত বা প্রতিনিধিত্ব, কেউ বলবে ভোট হচ্ছে সাক্ষ্য। ভোট যাই হোক না কেনো; আমি একটি কথা জিজ্ঞাসা করছি। সাক্ষ্য সর্বদা হকের ব্যাপারে দেয়া হবে। যে বাতিল শাসনব্যবস্থা রয়েছে, তার সমর্থনে ভোট দেয়া সেই বাতিল নেযামকে মেনে নেয়া যে, এই বাতিল শাসনব্যবস্থা সঠিক। আপনি শাহাদত-সাক্ষ্য বলছেন তো আমি শাহাদত মেনে নিচ্ছি, আপনি ওকালত-প্রতিনিধিত্ব বলছেন তো আমি ওকালত মেনে নিচ্ছি, আপনি আমানত বলছেন তো আমি আমানত মেনে নিচ্ছি। আপনি যাই বলতে চান বলুন, কিন্তু আপনি বলুন তো, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, এই নাপাক শাসনব্যবস্থা, ইংরেজদের দেয়া শাসনব্যবস্থা; এটাকে অর্যকরভাবে মেনে নেয়া নয় কি? উত্তর দিন, আপনারা ফাতওয়া দিন, এটাকে কার্যকরভাবে মেনে নেয়া নয় কি? (ইউটিউবে লিখে সার্চ করুন 'সংশয় নিরসন, মুফতি তাকি উসমানি (দা. বা.)র আশ্চর্য সংশয়' ২০.৪২ মি. - ২১.৩৯ মি.)
পরিশেষে হযরতের আর একটি লেখা দিয়ে আমি আমার আজকের লেখা সমাপ্ত করছি, যেখানে হযরত হামিদুল্লাহ জান (রহ) বলেন, আমরা বুযুর্গদের প্রতি সালাম নিবেদন করছি। আমরা বুযুর্গদের সম্মান করি। আমরা বুযুর্গদের ব্যাপারে মন্দ ধারণা পোষণ করি না। কিন্তু বুযুর্গদের এ কাজকে কিছু মৌলিক, কিছু অপারগতা অথবা জরুরত বা ইজতিহাদি ভুল মনে করুন। যে ব্যাখ্যাই করুন না কেনো; কিন্তু অভিজ্ঞতা এটাই প্রমাণ করে দেয় যে, গণতান্ত্রিক পন্থায় এই হযরতদের এই চেষ্টা-প্রচেষ্টা কামিয়াব হতে পারেনি। সুতরাং "لا يلدغ المؤمن من جحر واحد مرتین"
মুমিন একই গর্তে দু'বার দংশিত হয় না। পঞ্চাশ বছরের চেয়েও বেশী সময় আমরা লোকদের কাছে ভোট চেয়েছি। লোকেরা আমাদের ভোট দিয়েছে। কখনো এমনও হয়েছে যে, আমাদের পঁচাশি মেম্বার-সংসদ সদস্য অর্জন হয়েছে, জাতীয় এসেম্বলিতে যথেষ্ট আধিক্যতা অর্জন হয়েছে। কিন্তু আপনারা দেখেছেন, কোন ইসলামি বিধানটা এসেছে? তাঁরা বলে, আমরা প্রতিরক্ষা করছি। প্রতিরক্ষা কাকে বলে? নারী অধিকার বিল পাস হয়েছে। কেউ এটাকে প্রতিহত করতে পেরেছে? জবাব দিন! (সংসদে কিছু) বলা তো উদ্দেশ্য নয়। প্রতিরক্ষার অর্থ তো হচ্ছে কাজটাকে রুখে দেয়া। প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্য তো আগে বুঝে নিন। প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্য তো শুধুমাত্র বলা নয়। প্রতিরক্ষার অর্থ তো হচ্ছে রুখে দেয়া। কে রুখেছে সে বিলকে? পাস হয়েছে কি না বলুন? আমি আরয করবো, আল্লাহর ওয়াস্তে আগে বাস্তবতা বুঝুন! হে মৌলবিরা তাওবা করুন! আমি বলছি, আমি গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশ নিয়েছি। ৭০ সালে আমি মাওলানা সদরুশ শহিদের প্রার্থী ছিলাম। পাসও করেছি। ষাট হাজার ভোটের ব্যবধানে পাস করেছি। কিন্তু আমি পরিষ্কার ভাষায় বলছি, আমি এই গুনাহ থেকে তাওবা করে নিয়েছি। আল্লাহ আমাদের তাওবা কবুল করুন!
আর আপনাদের কাছে দরখাস্ত করছি, আপনারাও তাওবা করুন এবং খিলাফত শাসনব্যবস্থার জন্য আন্দোলনের মূল ভিত্তি অনুসারে ময়দানে আসুন! ঘাবড়াচ্ছেন কেনো? আসুন! ময়দানে আসুন! নববী পদ্ধতি অনুসরণ করে দেখুন ইসলামি শাসনব্যবস্থা আসে কি না! ওয়াল্লাহি যদি আপনি আল্লাহ ও তার রাসুল সাঃ মের দেখানো পথ ও পন্থা অনুসরণ করে থাকেন তাহলে আল্লাহ আপনাকে বিজয় দান করবেই আজ হোক কিংবা কাল।কারন রব্বে কারীম তার কালামুল্লায় নিজেকে খেতাব করে বলেন
والله غالب علي أمره ولكن اكثر الناس لا يعلمون ، وإن الله علي نصرهم لقدير ، والله علي كل شيئ قدير.
বিভাগ জামিয়াতুল উস্তাদ শহীদুল্লাহ্ ফজলুল বারী (রাহি)
0 মন্তব্য রয়েছে