ইসলামি জীবনব্যবস্থা কী ও কেন?
জীবনের শুরু থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে এক সুবিন্যস্ত দিকনির্দেশনার প্রয়োজন হয়—কীভাবে চলব, কীভাবে কথা বলব, কীভাবে সমাজ গড়ব, কীভাবে ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য করব—এসব প্রশ্নের সঠিক ও পরিপূর্ণ উত্তরই দেয় ইসলামি জীবনব্যবস্থা।
এটি কোনো মানুষের বানানো ব্যবস্থা নয়; বরং এটি সমগ্র সৃষ্টির রব আল্লাহ সুবহানাহু ও তা‘য়ালার প্রদত্ত এক পরিপূর্ণ, সামগ্রিক ও কল্যাণমুখী জীবনবিধান। যা বাস্তবায়নের জন্য আল্লাহ তায়ালা তার হাবিব নবী করিম (সাঃ) কে এ দুনিয়ায় পাঠান, যাতে তিনি দাওয়াতের মাধ্যমে পুরো দুনিয়ায় আল্লাহর বিধান এ দুনিয়ায় বাস্তবায়েন করতে পারে।
এ কারণেই ইসলামি জীবনব্যবস্থা শুধু একটি ধর্মীয় নির্দেশনা নয়; বরং এটি এক মহান সভ্যতার ভিত্তি, এক পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা—যা মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের প্রতিটি স্তরে আলোকবর্তিকার মতো পথ দেখায়।কিন্তু আজ কোথায় আমাদের এ চিন্তা কোথায় এ চেতনা, মুসলিম হয়েও আল্লাহ প্রদত্ত জীবনব্যবস্তা আমরা চাই না, শুধু চাই পশ্চিমা দেখানো পথ ও পন্থা, যা দেখে মনে হয় ইসলাম জীবনব্যবস্থা থেকে তার রচিত জীবনব্যবস্থা সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ। আর এটাই আজ আমাদের অধপাতের মুল কারণ। যতদিন পর্যন্ত এ ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে না আসবে ততদিন জাবত এ খেলাফাহ – জীবনব্যবস্থা আল্লাহ আমাদের কে দিবেন না।
কেন ইসলামি জীবনব্যবস্থা সর্বোত্তম?
পৃথিবীতে নানান জীবনব্যবস্থা প্রচলিত আছে—কোথাও পুঁজিবাদ, কোথাও বা সমাজতন্ত্র, কোথাও ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ, কোথাও বা ভিন্ন কোন ভ্রান্ত মতবাদ। কিন্তু এগুলো কোনটিও আল্লাহ প্রদত্ত নয়, বরং সব গুলোর উপরেই আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) এর সদাসর্বদা লানত ও অভিশাপ। কারন আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবনবিধানে কস্মিনকালেও শুখ সান্তি ও নিরাপত্তা থাকতে পারে না এবং পরবেও না। সাধারণ জ্ঞান থেকে ও যদি কেউ চিন্তা করে তাহলে সেই বুঝতে পারবে যে মানব রচিত কোন জীবনব্যবস্থাই কস্মিনকালেও শান্তি শৃংখলা থাকতে পারেনা, কারণ মানুষের জ্ঞান সীমিত ও সল্প, খণ্ডিত অভিজ্ঞতা ও স্বার্থান্ধ চিন্তায় গড়া।
অন্যদিকে ইসলামি জীবনব্যবস্থা এসেছে সেই মহান সত্তার পক্ষ থেকে, যিনি “আল-আলীম” (সর্বজ্ঞ) ও “আল-হাকীম” (সর্বপ্রজ্ঞাবান)।
তিনি জানেন কী আমাদের জন্য ভালো, কী ক্ষতিকর; কোনটি মানবতার কল্যাণ বয়ে আনে, আর কোনটি ধ্বংস ডেকে আনে। আর তিনিই একমাত্র সর্বজ্ঞানী
তাই ইসলামি জীবনব্যবস্থা হলো সেই একমাত্র পদ্ধতি, যা মানবজীবনের প্রতিটি দিককে ভারসাম্যপূর্ণভাবে পরিচালিত করতে সক্ষম—আত্মিকতা ও বস্তুবাদ, দুনিয়া ও আখিরাত, স্বাধীনতা ও দায়িত্ব—সবকিছুর মাঝে এক অপূর্ব সামঞ্জস্য তৈরি করে।
তাই মানুষ যতই জ্ঞানী হোক না কেন, তার জ্ঞান সীমাবদ্ধ—সে ভবিষ্যৎ জানে না, অন্তর দেখে না, চিরন্তন কল্যাণ নির্ধারণ করতে পারে না। তাই মানুষের বানানো কোনো জীবনব্যবস্থা কখনোই নিখুঁত ও নির্ভেজাল হতে পারে না।
ইসলামি জীবনব্যবস্থার বিস্তৃতি
ইসলাম শুধু নামাজ, রোজা, যাকাত, বা হজ্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ইসলাম হলো— একটি পুর্নাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যেখানে রয়েছে ন্যায় – ইনসাফের ও সাম্য - সমতা। আরো রয়েছে এক পুর্নাঙ্গ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, সামাজিক ব্যবস্থা ও পারিবারিক ব্যবস্থা এবং নৈতিক ব্যবস্থা যেখানে মানুষ তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে অগ্রসর হয়।
ইসলামি জীবনব্যবস্থা কেবল একটি শাসনব্যবস্থাই নয়; বরং এটি এক সম্পূর্ণ সভ্যতার রূপরেখা, যা মানুষকে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তি ও শান্তির পথে আহ্বান করে যায়। এমন এক মহা জীবনব্যবস্তা যা আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের কল্যাণের জন্যই দিয়েছেন, যদি কেউ তা পুর্নাঙ্গ মেনে চলে বা চলতে পারে তাহলে তার জন্য রয়েছে সুবিশাল ও বিস্তারিত এক জান্নাত যার তলদেশে নাহার প্রবাহিত হচ্ছে, যেখানে সে চিরকাল থাকবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা মুমিনদের জন্য তৈরি করেছেন।
কিন্তু আফসোস শত আফসোস আমাদের জন্য যে আমরা আজ সংখ্যা গরিষ্ঠ ও মুসলিম রাষ্ট্রের অধিকারি হয়েও ইসলামের কোন একটা হুকুম প্রতিষ্ঠা করতে বা মানতেও পারছিনা। আজ আমাদের চোখের সামনেই প্রবিত্র কোরআন কে অপমান করছে, পায়ের নিচে রেখে তাকে অপদস্ত করছে, অথচ আমরা সবকিছু দেখেও যেন কিছুই করতে পারছিনা, এ-সব আমাদের সবার সামনেই কিন্তু আমরা আজ নিরব নিস্তব্ধ, মনে হয় যেন আমাদের মাঝে কোন প্রন সঞ্চার নেই, এ যেন এক নিথর দেহ।
হায়! আজ যদি ইসলামি খেলাফাহ থাকতো, যদি আজ কোন বীর মুজাহিদ থাকতো, যদি আজ সত্যি কারের আশেকে রাসুল থাকতো, তাহলে কি এমন কুলাংগার বাংলায় জন্ম নিত? আর নিলেও এতক্ষণ সে এ দুনিয়ায় থাকতে পারতো? সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম দেশে থেকেও তাকে আমরা কিছু করতে পারিনি... হায় আফসোস! কোন জাতি ধংস হাওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, তাদের সামনেই আল্লাহ ও তার রাসুলের অবমাননা হবে আর তারা তা দেখেও চুপ থাকবে, বা না দেখার ভাণ ধরে বসে থাকবে, ইয়া আল্লাহ! যানিনা এ লাঞ্চনা কতদিন অবদি থাকবে আমাদের ভাগ্যে।
আর ভাগ্য পরিবর্তন হবেই বা কি ভাবে যেখানে আজকের মুসলমানদের বড় একটা অংশই এই জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞ, জ্ঞানহীন ও জাহেল, তারা জানেই না কি এই জীবনব্যবস্থা? কি আছে তাতে? কেনই বা আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে এ জীবন বিধান দিয়েছেন কি-ইবা তার লক্ষ উদ্দেশ্য?
আজ যখন সমাজে ইসলামি জীবনব্যবস্থার কথা বলা হয়, তখন যেন মানুষ মনে করে এ আবার কোন জীবনবিধান? কোথা থেকে এলো এ বিধান? আধুনিকতার এ যুগেও কি এ জীবনব্যবস্থা চলে ইত্যাদি ইত্যাদি...। আরো আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হলো যখন খুদ মাদ্রাসা মহলে এ জীবনব্যবস্তা নিয়ে কোন আলোচনা করা হয়, বা কেউ করে তখন অনেকই বলে উঠে এগুলো কি এখানে বলার জিনিস? এখানেই বলতে হবে এগুলো ইত্যাদি ইত্যাদি আরো কত কথা...। আর অনেকে তো সেসব ভাইদের কে লক্ষ করে বলে খারেজী, রাফেজেী, মানহাজি, ইত্যাদি ইত্যাদি আরো কত কিছু।
হায়! আমাদের বুঝ কখন হবে, কখণ আমরা বুঝব এ জীবনব্যবস্থা - বিধান আমাদেরেই জন্য, এ বিষয়ে আলোচনা আমাদেরই করতে হবে,এবং সবার আগে আমাকেই বলতে হবে - মানতে হবে। কারন আমরাই এ জাতির রাহবার, আমরাই কর্ণধার, আমরাই হলাম রাসুল (সাঃ) ও তার সাহাবিদের যোগ্য উত্তরসরি, তারা যে কাজের জন্য দিক বেদিক ছুটে বেড়িয়েছেন, জীবন বাজি রেখে জিহাদ -কিতাল করেছেন আমাদেরও তা বাস্তবয়ের জন্য কঠোর মেহনত ও শ্রম বেয়করতে হবে, আর তখনই কেনল ইসলামি জীবনব্যবস্তার আসল স্বাদ আস্সাধন করা - বুঝা সম্ভব, তখনই কেবল...। অন্যথাই কখনো – কস্মিনকালেও নয়।
তাহলে আমাদের করণীয় কি এখন...
সময় এসেছে ফিরে যাওয়ার, বাস্তবতা বুঝার -জানার ও জানতে চাওয়ার। আধুনিক এ সময়ও যদি আমরা এ বিষয় থেকে জ্ঞানহিন - অজ্ঞ থাকে তাহলে আমাদের চেয়ে দুর্ভাগা এ জগতে আর কেউ নেই। তাই সময় হয়েছে যেগে উঠার, ঘুড়ে দাড়াবার, তাই চলুন না আমরা কুরআন, হাদীস, ইসলামের ইতিহাস ও ইসলামী সভ্যতার মৌলিক দিকগুলো নিয়ে বিশদ এক অধ্যয়ন করি, যা থেকে আপনি নিজেও উপক্রিত হতে পারবেন এবং সাথে সাথে উম্মাহর জন্যও হবে বিশাল এক অর্জন – উপহার।
প্রিয় ভাই আমার! আপনাকে বলছি আপনার কি জানতে ইচ্ছে করে না কেমন ছিল ইসলামি শাসনব্যবস্থা,কেমন ছিল ন্যায়ভিত্তিক আদালত ও অর্থব্যবস্থা,কীভাবেই বা রাসূল ﷺ ও খলিফাগণ ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । কেমন ছিলো তাদের পথ ও পদ্ধতি? কি ভাবেই বা তারা এতো অল্প সময় অর্ধ দুয়িয়া শাসন করতে ও খিলাফা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন।
প্রিয় ভাই আমার! আপনি যখনই এ নিয়ে দীর্ঘ ও বিস্তিত এক পড়াশোনা করবেন, তখনই কেবল আপনি বুঝতে পারবেন যে ইসলাম জীবনব্যবস্থা কোন সাধারণ জীবনব্যবস্থা নয় বরং এটি এক বাস্তবতার চূড়ান্ত রূপ, সুশৃঙ্খল, ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা,যেখানে মানুষের প্রতিটি দিকই আল্লাহর সন্তুষ্টির আলোয় আলোকিত হয়।
আখেরি গুজারিশ
পরে শেষে আবারও একটি কথা রিপিট করে আমি আমার লেখা শেষ করছি, যে ইসলামি জীবনব্যবস্থা এটি শুধু একটি জীবনব্যবস্থাই নয়, বরং এটি মানব জাতির একমাত্র সঠিক পথ –পন্থা, যা মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতে চিরশুখি বানায়। শুধুই বানায়, শুধুই...।
তাই আমাদের উচিত, এই জীবনব্যবস্থাকে ভালোভাবে জানা, বোঝা ও নিজের জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা।
তাই আসুন, জাহিলিয়াতের ইতি টেনে ইসলামি জীবনব্যবস্থাকে জানি, বুঝি এবং জীবনের প্রতিটি স্তরে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি, যাতে আমরা প্রকৃত অর্থে “আল্লাহর বান্দা” ও তার রাসূল সাঃ এর প্রকৃতি উম্মত” হতে পারি। হে আল্লাহ আপনি আমাদের কে আপনার জীবন বিধান অনুযায়ী চলার তাওফিক দান করুন আমিন ইয়া রব্বাল আলামিন।
> اللهم وفّقنا للعيش بشريعتك و بطريقة النبي الأمين الذي بعثه رحمة للعالمين، واجعلنا من عبادك الصالحين. واجعلنا من الذين لا خوف عليهم ولا هم يحزنون

0 মন্তব্য রয়েছে