ইসলাম কেবল একটি ধর্ম নয়

 

ইসলাম কেবল একটি ধর্ম নয়, বরং এক পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা, যা মানবজীবনের সর্বস্তরে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছে। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক রাষ্ট্রীয় জীবনইসলামের বিধান সব ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট, সুপরিকল্পিত এবং চিরন্তন।

মানব জাতিকে আল্লাহ তায়ালা নারী পুরুষ এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করে সৃষ্টি করেছেন। মহাবিশ্বের নিয়মেই কেউ একা সম্পূর্ণ নয়নারী পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থার জন্য উভয়েরই রয়েছে অনস্বীকার্য ভূমিকা। তাই সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার্থে উভয়কে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, দায়িত্ববোধ অধিকার চর্চায় সমানভাবে সচেষ্ট থাকতে হয়।

আল্লাহ তায়ালা নারী পুরুষকে পৃথক বৈশিষ্ট্য, যোগ্যতা দায়িত্বের আলোকে সৃষ্টি করেছেন। নারীর যেমন রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট অধিকার কর্তব্য, তেমনি পুরুষেরও আছে নিজস্ব দায়িত্ব সীমাবদ্ধতা। কিন্তু যখন কোনো পক্ষ নিজ কর্তব্যে গাফিলতি করে অথবা অপরের অধিকারে হস্তক্ষেপ করে, তখনই সমাজ কাঠামোর ভিত কেঁপে ওঠে। ধীরে ধীরে তৈরি হয় বৈষম্য, বিদ্বেষ বিশৃঙ্খলা।

দুঃখজনক হলেও সত্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই অবহেলার শিকার হন নারীরা। সমাজের প্রতিটি স্তরেই নারীরা কমবেশি উপেক্ষিত। তার দায়িত্ব গ্রহণ করতে গিয়ে জন্মদাতা পিতা কখনো তাকে শোনায় Self Dependet হওয়ার কথা l যে মা বুকের অমৃত পান করিয়ে নিজ কন্যাকে মানুষ করেছে সম্পদ বন্টনের বেলায় সে হয়ে যায় পুত্রঘেষা l

আল্লাহ তায়ালা নারী পুরুষকে পৃথক বৈশিষ্ট্য, যোগ্যতা দায়িত্বের আলোকে সৃষ্টি করেছেন। নারীর যেমন রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট অধিকার কর্তব্য, তেমনি পুরুষেরও কিন্তু যখন কোনো পক্ষ নিজ কর্তব্যে উদাসীন হয়ে পড়ে , তখনই ভারসাম্যের প্রাচীরে চির ধরে l ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে একটি সমাজ ব্যবস্থা।

নারী আজ শারীরিক মানসিক নির্যাতনের শিকারউঁচু স্তরের শিক্ষিত সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই প্রবণতা বিস্তার লাভ করেছে। এমনকি ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের ক্ষেত্রেও এই বাস্তবতা সম্পূর্ণ অস্বীকার করা যায় না।

সবচেয়ে দুঃখজনক যে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশে, যেখানে আল্লাহর কোরআন রাসুল (সা.)-এর হাদিস সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান, সেখানেও নারী অধিকারের প্রশ্নে মানুষ পশ্চিমা সভ্যতার দিকে তাকিয়ে থাকে। অথচ ইসলামই একমাত্র জীবনব্যবস্থা যেখানে নারীর সম্মান, অধিকার, নিরাপত্তা মর্যাদার প্রশ্নে রয়েছে পরিপূর্ণ বাস্তবসম্মত নির্দেশনা।

পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি বাহ্যিকভাবে মানবিক যুক্তিবাদী মনে হলেও তার পুরোটাই বায়বীয় l তার বিপরীতে ইসলাম নারীকে যে অধিকার দিয়েছে তা শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়। বরং, নারী অধিকার বিষয়ে সচেতন যে কোন সুস্থ বিবেকের মানুষ তার ন্যায় নিষ্ঠার সাক্ষী হবে l

পশ্চিমা বিশ্বে আজকাল উচ্চরবে স্লোগান দেয়া হচ্ছে, “নর-নারী ভেদাভেদ মানি না, নারীকে পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে, একসাথে কাজ করতে দিতে হবে l” সমগ্র বিশ্বে তারা এই স্লোগান ছড়িয়ে দিয়েছে l কিন্তু তারা ভুলে বসেছে যে, নর-নারীকে যদি একই কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয় তাহলে দৈহিক পার্থক্য কেন!? নারী পুরুষের আকৃতি প্রকৃতির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান l তাদের উভয়ের মন মেজাজ এবং যোগ্যতায় রয়েছে বিস্তর তফাত l কাজেই, “নর-নারীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই”- এ কথা বলার দ্বারা তারা স্বভাব-প্রকৃতির সাথে বিদ্রোহ করছে l

 মানুষের জীবন মৌলিকভাবে দুইটি শাখায় বিভক্ত l একটি ঘরের ভেতরের, অন্যটি ঘরের বাহিরের l এই উভয় শাখাই একটি আরেকটি সম্পূরক l উভয়টি একসাথে গ্রহণ করা ছাড়া একটি সুশৃংখল এবং ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা কিছুতেই সম্ভব নয় l যদি কখনো কোন একটি শাখার কাজ নিজ স্থানে কার্যকর হতে না পারে তাহলে কেবল একটি শাখা নয় বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবে জীবনের ভারসাম্য l সর্বশেষ আসমানি ধর্ম ইসলামও সেই ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থাপনাকে বলা রেখেছে l পুরুষরা ঘরের বাহিরের আর নারীরা ঘরের ভিতরের দায়িত্ব পালন করবে l সূরা আহযাবের ৩৩ নাম্বার আয়াতে নারীদেরকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে l তাই এটা আল্লাহ প্রদত্ত দেয়া নারীর অধিকার l যারা নারী থেকে  তাদের ঘরে থাকার অধিকার ছিনিয়ে নিতে চায় তাদের উদ্দেশ্য কখনো সচ্ছ নয় l

পশ্চিমা বিশ্বে নারীদের ঘরের বাইরে নিয়ে আসার ধারাটা শুরু হয় খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপে ঘটে যাওয়া শিল্প বিপ্লবের পর থেকে l এই বিপ্লবের পর তাদের জীবন অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে যায় l ফলে স্ত্রীদের ব্যয়ভার বহন করা পুরুষেরা নিজেদের উপর অত্যন্ত বোঝা মনে করে l তখন তারা এই সমস্যার সমাধানকল্পে নারীদের বলে, “তোমাদেরকে খামোখা শতশত বছর ধরে ঘরে বন্দী রাখা হয়েছে l এটা তোমাদের প্রতি অবিচার l তোমরা এই বন্দিশালা ছিন্ন করে মুক্ত হও l সময় এসেছে পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার l নিজের দায়িত্ব নিজেই বুঝে নেবার l এমনটা করলে তোমরা উন্নতির পথে অগ্রসর হতে থাকবে l তাদের এমন সব কথাই  দুরভিসন্ধিমূলক। তাদের উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের কাঁধ থেকে দায়িত্বভার নামিয়ে নারীদের নাজুক কাঁধে তুলে দেয়া। এতে  তারা সফলও হল। তাদের স্লোগান বেশ কাজে দিয়েছে । স্বাধীনতা দানের নামে এভাবে নারীদের সাথে প্রহসন করা হয়েছে । ওরিয়েন্টালিস্টদের মতে এটা “নারী মুক্তির আন্দোলন” কিন্তু বাস্তবে তা নারীর সাথে এক ভয়াবহ প্রতারণা । এই প্রতারণা ও ধোকার শিকার হয়ে নারী তার ঘর ছেড়ে বাইরে মনোযোগী হয়েছে ।  সকালে ঘুম থেকে উঠে স্বামী-স্ত্রী উভয়ই কর্মক্ষেত্রে চলে যায় । সন্তান থাকলে তাকে চাইল্ড কেয়ারে দিয়ে দেয়া হয় অথবা তুলে দেয়া হয় কোন প্রাইভেট সেবিকার হাতে । সেখানে সেই বাচ্চা বেড়ে ওঠে বাবা-মার স্নেহ ভালোবাসাহীন যান্ত্রিক জীবনে । তখন তার হৃদয়ে বাবা-মার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার স্থান থাকে না । কারণ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার  পথটাই তো রুদ্ধ হয়ে গেছে । আজ পশ্চিমে পারিবারিক ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে । সেখানে আজ নারী হারিয়ে ফেলেছে তার ভালোবাসা ও সম্ভ্রম । আর তারাই এর নাম দিয়েছে নারী মর্যাদা । সেখানে আজ  নারীকে গল্প শোনানো হয় পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করে উন্নতি লাভ করবার এবং নারীদের বলা হয়, “তোমরা রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারবে, বড় বড় পদবী লাভ করতে পারবে । এ যেন মরীচিকা দেখিয়ে জলের তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা ! তাদের কাছে প্রশ্ন হল,” আজ অব্দি আমেরিকার ইতিহাসে কতজন নারী প্রেসিডেন্ট হয়েছে? একজনও হতে পারেনি । তবে কেন নারীর সাথে এই প্রতারণা । নারী সৃষ্টি রাস্তা ঝাড়ু দেওয়ার বা মার্কেটে “সেলস গার্ল” এর কাজ করার জন্য হয়নি । ইসলাম তো নারীকে শেহজাদী বানিয়েছে । তার মাথায় পরিয়েছে সম্মান ও মর্যাদার তাজ । পশ্চিমা সমাজ নারীর উপর পারিবারিক দায়িত্বের পাশাপাশি চাপিয়ে দিয়েছে সামাজিক কাজকর্ম । নারী নাজুক কাঁধ যার ভার বহনে বড়ই দুর্বল ।

এখন পরিসংখ্যান মিলিয়ে দেখার সময়, নারী ছাড়া কি সমাজের অর্ধেক অংশকর্মহীন হয়ে পড়তো? তারা বলে, “আমরা পূর্ণ জনসংখ্যার অর্ধেককে কর্মহীন করে জাতীয় উন্নতি ত্বরান্বিত করতে পারবো না । সুতরাং নারীকেও অংশগ্রহণ করতে হবে ।“ তাদের এমন কথা শুনে মনে হয় দেশে আর কোনো কর্মক্ষম পুরুষ নেই । সবাইকে কাজে লাগানোর পর এখনো হাজারো কাজ বাকি আছে যার জন্য Manpower প্রয়োজন । অথচ আজও বহু যোগ্যতা সম্পন্ন পুরুষ বেকার । পথে পথে যারা জুতা ক্ষয় করে বেড়াচ্ছে । কোথাও কোন কেরানি পথ খালি হলেও গ্র্যাজুয়েট ও মাস্টার ডিগ্রিধারীদের দরখাস্তের হিড়িক পড়ে যায় । জাতীয় উন্নয়নে প্রথমে দেশের পুরুষ নাগরিকদের কাজে লাগিয়ে তারপর অবশিষ্ট অর্ধেককে নিয়ে চিন্তা করা হোক তারা কর্মহীন কিনা । আল্লাহতালা নারীকে ঘরে থাকার অধিকার দিয়েছেন । নারীকে তো এজন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে যে তাকে কেন্দ্র করে পুরো পরিবার আবর্তিত হবে । সে ঘরে শৃঙ্খলা রক্ষা করবে এবং সন্তান প্রতিপালন করবে । সেখান থেকে সন্তান জীবন যাপনের সঠিক রীতিনীতি শিখবে । এ কথাগুলো যদি কেবল ইসলামিক ব্যক্তিবর্গ বলতেন তবে বলা যেত এটা ধর্মীয় বাড়াবাড়ি । কিন্তু না । আধুনিক মানুষ যাদেরকে জ্ঞানী মনে করে, সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট মিকাইল গর্বাচেভও বলেন, “আমাদের পশ্চিমা সমাজে নারীদেরকে ঘরের বাইরে নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে ফ্যামিলি সিস্টেম ধ্বংস হয়ে গেছে । অথচ আল্লাহতালা নারীকে সৃষ্টি করেছেন ফ্যামিলি সিস্টেম সুদৃঢ় করার জন্য । গাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নারীকে কাজে লাগালে কিছুটা জাতীয় আয় বৃদ্ধি পাবে । কিন্তু এটাই শেষ কথা নয় । যদি ফ্যামিলি সিস্টেমই ভেঙে পড়ে তাহলে উন্নতির পথেটাই তো বন্ধ হয়ে গেল ।

এখন প্রশ্ন হতে পারে নারীরা কি তাহলে ঘরেই পরে থাকবে ? তার কি  বাহিরে যাওয়ার অধিকার নেই ? অবশ্যই আছে। ঘরে থাকতে  বলা হয়েছে তার মানে এটা নয় সে বাহিরে যেতে পারবে না.সারাক্ষন ঘরেই বন্দি থাকবে। ঘরে থাকার  অর্থ হলো তার স্বাভাবিক বিচরণ ক্ষেত্র এটাই । যদি কখনো বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় সে অবশ্যই যাবে। যদি কখনো তার দায়িত্ব নেয়ার মতো কেও না থাকে তাহলে সে জীবিকা নির্বাহের জন্য  বাইরে যেতে পারবে তবে সে ক্ষেত্রেও তার সম্মান ও মর্যাদার প্রতি লক্ষ রাখতে  হবে। যাতে করে সে কোনো খারাপ পরিস্থিতির শিকার না হয়।      শুধু প্রয়োজনের  জন্য নয় কখনো গুড়তে যেতে চাইলে তাও  পারবে।  এতে কোনো বাধা নেই।  তবে তার নিরাপত্তার  জন্য সাথে  মাহরাম থাকতে হবে।  যাতে করে সে পথে কোনো বিগ্নতার শিকার না হয়।যদি মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সীরাতের দিকে লক্ষ করা হয় তবে স্ত্রীদের সাথে  আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ তা একে বাড়ে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। তিনি তার স্ত্রীদের নিয়ে গুরতে যেতেন। তাদের সাথে  গল্প করতেন, তাদেরকে সময় দিতেন।  

ইসলাম নারীকে কখনোই একা ছাড়েনি। জীবনের প্রতিটি স্তরে - শৈশবে পিতা, যৌবনে স্বামী, বার্ধক্যে পুত্রতাঁর নিরাপত্তা, দায়িত্ব ও মর্যাদা পুরুষের হাতে সুনিপুণভাবে অর্পণ করেছে। নারী যেন ভালোবাসা, সম্মান ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত থাকে, সে ব্যবস্থাই ইসলাম করেছে। নারী এখানে উপেক্ষিত নয়, বরং সম্মানের আসনে সমুন্নত এক সত্তা।

 

আরও পড়ুন...

0 মন্তব্য রয়েছে

একটি মন্তব্য করুন

চিন্তা করবেন না! আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না।

জনপ্রিয় ব্লগ

বিভাগ

সর্বশেষ ব্লগ