ইসলাম মানব জাতিকে কী দিয়েছে
মুহাম্মাদ আযহারুল ইসলাম
জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া ঢাকা
"ইসলাম মানবজাতিকে কী দিয়েছে" সমাজে বহুল প্রচলিত একটি প্রশ্ন। ইসলাম বিদ্বেষীরা তো আছেই, মুসলিম হয়েও হতাশাগ্রস্ত কিছু লোক এমন প্রশ্নে সংশয়ের শিকার। প্রয়োজন বাস্তব বিষয়টি যুগের ভাষায় পেশ করা। তার জন্যই এই ছোট্ট প্রয়াস। হতে পারে কিছু মানুষ এর মাঝে তার প্রশ্নের সমাধান খুঁজে পাবে। পাবে কিছু লোক সঠিক পথের দিশা। পাঠটা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে হলে কিছুটা হলেও ফায়দা হবে। ইনশাআল্লাহ।
ইসলাম খোদা প্রদত্ত সর্বশেষ, সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। পরম করুণাময়, মেহেরবান আল্লাহ মানব মুক্তির জন্যই এ আসমানী ধর্ম মানব জাতিকে উপহার দিয়েছেন। ইসলামের আবির্ভাবটা একটি বর্বরোচিত যুগে ঘটেছিল। সে সময়ের পরিস্থিতি ছিল খুবই নাজুক। জাহেলী যুগ নামে প্রসিদ্ধ ঐ যুগের মানুষগুলো ছিল বর্বরতাপূর্ণ। মনুষ্যত্বের লেশটুকু পাওয়া কঠিন ছিল। যেন মানবতা তার শেষ নিঃশ্বাসটুকু ত্যাগ করছিল। পাশবিক আচরণ ও আত্মকেন্দ্রিকতা ছিল মানুষের চারিত্রিক অবস্থা। পরস্পরে হানাহানি, মারামারি ছিল তাদের নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। সে সমাজে না ছিল নারীর কোন মান-মর্যাদা, না মাথা গোঁজার জায়গা। নীতি নৈতিকতার এতটাই অভাব ছিল, মানুষ তার জ্যন্ত মেয়েকে কবরস্থ করতে কুণ্ঠাবোধ করত না। নারীরা ছিল খেলার বস্তু। গোত্রক কবিলা কেন্দ্রিক দলাদলি ও দ্বন্দ-কলহের ছড়াছড়ি ছিল বেশ। যে কোন তুচ্ছ ঘটনাই যুদ্ধের কারন হয়ে যেত। আর যুদ্ধের সে কি ভয়াবহ অবস্থা! একবার শুরু হলে থামার কোন নাম নেই বরং তা বংশ পরম্পরায় বা বছরের পর বছর চলতে থাকত। ইতিহাসে ফিজারের যুদ্ধের কথা কে না জানে। সে সময়কার মানুষগুলোর আচার-আচরণ হিংস্র-চতুষ্পদ জন্তুকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সবল দুর্বলের উপর চড়াও হয়ে যেত। মদপান, মৃত প্রাণী ভক্ষণ ছিল তাদের খাবারের স্বাভাবিক মেনু। অন্যের সম্পদ জবর দখল, অন্যের অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ– এগুলো তো ছিল তাদের সাধারন চরিত্র। হালাল-হারামের কোন বাছ-বিচার ছিল না। এ তো পার্থিব জীবনের মানবিক অবক্ষয়। পরকালীন জীবন সম্পর্কেও তাদের তেমন কোনো পরোয়া ছিল না। বহু খোদায় বিশ্বাসী সে মানুষেরা পরম দয়ালু, মহা শক্তিধর, ক্ষমতাবান খোদার পরিবর্তে নির্জীব প্রাণহীন মাটির মূর্তির পূজা করত।
মোটকথা, উভয় জগত সম্পর্কেই তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। অজ্ঞতা ও চারিত্রিক অবক্ষয় তাদেরকে পশুর কাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল।
এমনি নাজুক পরিস্থিতিতে ইসলামের নবী, শান্তির দূত, রহমতের নবী, মায়ার ছবি, নবীদের নবী, নবীকুল শিরোমনি, সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানব মুক্তির জন্যে তাওহীদের ডাক দেন। এক খোদার দাসত্বের আহ্বান জানান। সকল ধর্ম ও মতাদর্শ ছেড়ে মিল্লাতে ইবরাহীমের প্রতি উজ্জীবিত করেন। সমাজের প্রতিটি মানুষকে কোনটি ন্যায়, কোনটি অন্যায় এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ন্যায়কে ন্যায়, অন্যায়কে অন্যায় জ্ঞান করার আহ্বান করেন। যিনা-ব্যভিচার, মদপান, মৃত প্রানী ভক্ষণ, অন্যের সম্পদ জবর দখল করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। পাওনাদারকে তার হক বুঝিয়ে দেয়া, দূর্বলের প্রতি জুলুম না করা, বিপদে অন্যকে সাহায্য করা, মজলুমের পাশে দাঁড়ানো ছিল তাঁর মহৎ গুণাবলির অন্যতম। অন্যায়ভাবে কোন প্রাণকে হত্যা করা, বা দারিদ্র্যের ভয়ে অথবা তার কারণে সন্তান হত্যার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করাকে হারাম করেছেন। মানুষের সামনে মহান আল্লাহর চিরন্তবাণী জানিয়ে দিয়ে বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন:
قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ ۖ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۖ وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُمْ مِنْ إِمْلَاقٍ ۖ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ ۖ وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ ۖ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ۚ ذَٰلِكُم وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
"তুমি বল! আসো তোমরা! আমি তোমাদেরকে তোমাদের রবের সে বানী পড়ে শুনাই, যাতে রয়েছে সে সব বিষয়ের বর্ণনা, যা তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন। (তিনি এই মর্মে আদেশ করেছেন) তোমরা তার সাথে কোন শরিক সাব্যস্ত করবেনা। মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। নিজ সন্তানদেরকে দারিদ্র্যের কারণে হত্যা করবে না (হত্যার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না)। (কারণ) আমি তোমাদেরকে রিযিক দিচ্ছি, তাদেরকেও দিব। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে কোন ধরনের অম্লীলতার আশ-পাশেও ভিড়বে না। ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া অন্যায়ভাবে কোন প্রাণকে হত্যা করবে না। এই সব বিষয়ে তিনি তোমাদেরকে ওসিয়ত করছেন, যাতে তোমরা (গুরুত্ব দিয়ে) এগুলো নিয়ে ভাব।"
নিরাপদ ও সুস্থ সমাজঃ একটি সুন্দর, সুস্থ, নিরাপত্তাজনিত সমাজব্যবস্থার সাংবিধানিক ও বাস্তবিক রুপরেখা কেমন হতে পারে, এটাও মানবজাতিকে ইসলাম উপহার দিয়েছে। সূরা বানী ইসরাঈলে আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُم خَشْيَةَ إِمْلَاقٍ ۖ نَّحْنُ نَرْزُقُهُمْ وَإِيَّاكُمْ ۚ إِنَّ قَتْلَهُمْ كَانَ خِطْئًا كَبِيرًا. وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَىٰ ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا. وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ۗ وَمَن قُتِلَ مَظْلُومًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهِ سُلْطَانًا فَلَا يُسْرِف فِّي
الْقَتْلِ ۖ إِنَّهُ كَانَ مَنْصُورًا.
وَلَا تَقْرَبُوا مَالَ الْيَتِيمِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّىٰ يَبْلُغَ أَشُدَّهُ ۚ وَأَوْفُوا بِالْعَهْدِ ۖ إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْؤُولًا. وَأَوْفُوا الْكَيْلَ إِذَا كِلْتُمْ وَزِنُوا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيمِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا. وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۚ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْؤُولًا.
"দরিদ্রের ভয়ে তোমরা নিজ সন্তানদেরকে হত্যা করো না। (হত্যার ব্যবস্থা গ্রহণ করো না), (কারণ) আমি তাদেরকে রিযিক দিবো এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহা অন্যায়। ব্যভিচারের কাছেও ভিড়বে না। এ তো চূড়ান্ত পর্যায়ের অশ্লীলতা এবং পথ হিসেবেও খুবই মন্দ। যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া কোন প্রাণকে হত্যা করবে না। আর যে মজলুম হয়ে নিহত হলো তার ওলিকে আমি (কিসাস গ্রহণের) ক্ষমতা দিব। হ্যাঁ, এক্ষেত্রে সে যেন আবার সীমালঙ্ঘন না করে। নিশ্চয় তাকে (মাজলুমকে) সাহায্য করা হবে।
ইয়াতিমরা সাবালক হওয়া পর্যন্ত ন্যায়সঙ্গত ভাবেই তাদের সম্পদে হস্তক্ষেপ করবে। ওয়াদা পূর্ণ করবে। নিশ্চয় ওয়াদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। যখন তোমরা পাত্রের সাহায্যে মেপে দিবে। পূর্ণতা রক্ষা করে ঠিকঠাক মেপে দিবে এবং সথাযথ পরিমাপক দিয়ে ওজন করবে। এগুলো (যথানিয়মে চলা) উত্তম ও পরিনামে অধিকতর ভালো। যে বিষয়ে সঠিক জ্ঞান নেই (তা না জেনে) তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তরকে এগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।"
এরচেয়ে সুন্দর সমাজব্যবস্থা আর কী হতে পারে। ইসলামের এই সুন্দর উপহারকে যদি বর্তমান সময়ে কাজে লাগানো হয় তাহলে সমাজের রংটাই বদলে যাবে। এগুলো কেবল চিন্তাগত কোন থিওরি নয় বরং ইসলাম এর প্রতিটা বিষয় বাস্তবে পরিণত করে দেখিয়েছে। । আমরা যদি নবীজীর সীরাত ও খুলাফায়ে রাশেদিনের জীবনী ও শাসনকাল অধ্যয়ন করি তাহলে এগুলোর বাস্তব নমুনা আমাদের সামনে ফুটে উঠবে।
'ইসলাম মানবজাতিকে কি দিয়েছে' এর জবাবে যদি উপরের আয়াতগুলোর প্রতিটির ব্যাখ্যা পেশ করা হয় তাহলে ইহা একটি গ্রন্থে পরিণত হবে। কলেবর যাতে দীর্ঘ না হয় তাই সংক্ষিপ্ততার জন্য কিছু পয়েন্ট তুলে ধরছি।
অসম বিচার: বর্বর মানুষগুলো অন্যায় হত্যা করতে কোন দ্বিধাবোধ করত না। আবার এর সঠিক বিচারও হতো না। দেখা যেত একজনের হত্যার বদলায় একটি গোষ্ঠীর অনেককে হত্যা করা হতো। আবার ঘাতক ক্ষমতাধর কেউ হলে তাকে কেউ কিছু বলারও সাহস পেত না। কোন গোত্রের গোলাম কে হত্যা করা হলে বিনিময়ে অপর গোত্রের স্বাধীন লোককে হত্যা করা হতো। আবার এর উল্টোও হতো।
ইসলাম এখানে সমতার বিধান দিয়েছে। প্রতিটি প্রাণের সম্মানকে মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। অন্যায় হত্যাকে ঘৃণিত কাজ বলে আখ্যা দিয়েছে। এরপরও যদি কেউ হত্যা করে সীমালঙ্ঘন করে, তাহলে বিনিময়ে হত্যাকারীকেই হত্যা করতে পারবে, অন্যকে নয়। এই সুযোগটি ইসলাম মানবতাকে বহাল রাখার জন্য দিয়েছে। আবার হত্যার বিনিময় গ্রহনকারী ওলীকেও সতর্ক করেছে যে, সে যেন বিনিময় নিতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন না করে। হত্যার আগে বা পরে আকৃতি বিকৃতি করাকে হারাম করেছে। কেবলই মানব-সম্মান রক্ষার জন্যে।
প্রসঙ্গ পরনিন্দা: একে অপরের নিন্দা, অপবাদ দিয়ে ফাঁসানো সে সময়ে এটা স্বাভাবিক কিছু ছিল না। তেমন কোন দোষনীয় ব্যাপারও ছিল না। কিন্তু ইসলাম এসে সমাজটাকে উল্টো পথ থেকে সোজা পথে দাঁড় করাল। পরনিন্দাকে জঘন্য অপরাধ বলে আখ্যা দিল। জানিয়ে দিল, তোমাদের কেউ যেন একে অপরের দোষচর্চা না করে। এ তো কারো দোষ থাকলে সেটা নিয়ে চর্চা করার বিধান। পক্ষান্তরে কারো যদি দোষ না থাকে, তারপরও তার উপর রটিয়ে দেয়া হয়, তাহলে তো সেক্ষেত্রে ইসলাম বড়ই কঠিন।
মানুষের প্রতি সম্মান: ইসলাম প্রতিটি বনি আদমের মান-মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়েছে। সেটা রক্ষার যথাযথ ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে। একদা নবীজী বসে ছিলেন। হঠাৎ পাশ দিয়ে এক ইহুদীর লাশ নিয়ে যাওয়া হলো। নবীজী তখন দাঁড়িয়ে গেলেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, সে তো ইহুদী আপনি কেনো দাঁড়ালেন? নবজী বললেন, সে কি একজন মানুষ নয়? সীরাতের এই ঘটনাটি কে না জানে। মানব সম্মানে এর চেয়ে কি উত্তম দৃষ্টান্ত হতে পারে?। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:
ولقد كرمنا بني آدم وحملناهم في البر و البحر ورزقناهم من الطبيبات وفضلناهم على كثير ممن خلقنا تفضيلا .
"আমি বনি আদমকে সম্মানিত করেছি। তাদেরকে জলে-স্থলে আরোহণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আবার অনেক সৃষ্টির উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্বও দিয়েছি।"
খোদা তাআলা ধর্ম-বর্ণের কোন ভেদাভেদ কারেন নি। বরং সকল বনি আদমকে একটি মর্যাদায় একত্র করেছেন।
মানুষ হিসেবে দাস-দাসী: দাস-দাসী নতুন কিছু নয়। বরং ইসলাম পূর্ব বহু আগ থেকেই এর প্রচলন। কিন্তু ইসলাম পূর্ববর্তী ও পরবর্তীর মাঝে তফাৎ অনেক। ইসলাম পূর্বে দাস-দাসীদের কোন মান-মর্যাদা ছিল না। বরং ছিল অবহেলিত। না তারা ভালো খেতে পেত, না ভালো পরতে পেত। কিন্তু ইসলাম এই অবহেলার অবসান ঘটিয়েছে। মনিবকে হুঁশিয়ার করে জানিয়েছে, তোমরা যেমন মানুষ দাস-দাসীরাও তেমন মানুষ। তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা খাওয়াবে। নিজেরা যা পরবে তাদেরকেও তা পরাবে। এক্ষেত্রে তো বদর যুদ্ধের বন্দিরা উত্তম দৃষ্টান্ত। এখানেই নয়, ইসলাম দাসমুক্তিতেও উৎসাহ দিয়েছে। দাস মুক্তিতে সহযোগিতাকে সৎকর্মশীলদের কর্ম বলে আখ্যা দিয়েছে। হাদিছে এসেছে, মুআয (রা) বলেনঃ
قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم " يا معاذ ! ما خلق الله شيئا على وجه الأرض أحب إليه من العناق
"নবীজী বলেন: হে মুআয! পৃথিবীর বুকে আল্লাহ দাস মুক্তির চেয়ে অধিক প্রিয় আর কিছু সৃষ্টি করেন নি।" (দারুকুতনী)।
এই হাদিস নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায় গোলাম আযাদ ইসলামে কতটা পছন্দনীয় কাজ। দাসমুক্তি যেহেতু সম্পদ হাতছাড়া, তাই মানুষ স্বভাবগত কার্পণ্যের কারণে এটা স্বাভাবিকভাবে নাও নিতে পারে। তাই এক্ষেত্রে ইসলাম কৌশল অবলম্বন করে যিহারের কাফফারা ইত্যাদির মাধ্যমে দাস মুক্তির ব্যবস্থা করেছে। বর্তমান যুগে যদিও দাস প্রথা নেই তবুও ইসলাম যে শুরু থেকেই কতটা মানবিক এটা বুঝানোর জন্য দাস-দাসীর আলোচনা করা হলো।
প্রসঙ্গ নারী অধিকার: জাহেলী যুগের অবস্থা তো এমন ছিল যে, কন্যা সন্তান মানেই বোঝা। কেউ যদি কোনভাবে বুঝতে পারত যে, তার কন্যা সন্তান জন্ম নিতে পারে বা জন্ম গ্রহণ করেছে তাহলে তার চেহারা বিষণ্নতায় মলিন হয়ে যেত। আবার মহিলারা মীরাছ থেকেও বঞ্চিত থাকত। সবচেয়ে বড় কথা হলো একজন নারীর যে অধিকারটুকু তার প্রাপ্য সেটা সে পেতনা।
ইসলাম এসে কন্যা সন্তানকে রহমত বরকতের কারণ বানিয়েছে। সমাজে তার মমার্দাকে বুলণ্ঠিত করেছে। তাকে শুধু অধিকার নয় বরং অগ্রাধিকার দিয়েছে। নারীকে দিয়েছে ঘরে থাকার অধিকার। আর দায়িত্বশীল পুরুষকে দিয়েছে তার ভরণ পোষণের দায়িত্ব। নারীকে বানিয়েছে ঘরের রাণী আর পুরুষকে বানিয়েছে বাহিরের রাজা। নারীর অধিকারে তো আল্লাহ পাক কুরআনে "নিসা" সুরাই নাযিল করেছেন।
মোটকথা অবহেলিত, অধিকার বঞ্চিত নারীদেরকে ইসলাম তাদের পূর্ণ অধিকার বা অগ্রাধিকার দিয়েছে। মা জাতিতে ভূষিত করে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন কারিয়ে দিয়েছে।
অমুসলমিদের শান্তি ও নিরাপত্তার অধিকার: ইসলাম পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ধর্ম। এতে বিন্দু মাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। এর স্বীকৃতি মুসলিমরা তো বটেই জাহেলী যুগের কাফের-মুশরিকরাও দিয়েছে। যদিও তারা অনেকে ঈমান আনেনি। ইসলাম যেহেতু শ্রেষ্ঠ ধর্ম তাই পৃথিবীতে তার অনুসারীরাই হবে সর্বশ্রেষ্ট এবং বসবাসের একমাত্র হকদার। তা সত্ত্বেও ইসলাম অমুসলিমদেরকে মানুষ হিসেবে তার মর্যাদাটুকু দিয়েছে। নিজ অনুসারীদেরকে তাদের সাথে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছে। এমনকি ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করারও অনুমতি পর্যন্ত দেয়নি। ইসলাম বলেছে "ধর্ম গ্রহণে কোন চাপাচাপি বা জোরাজুরি নেই" তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতায়ও ইসলাম কোন হস্তক্ষেপ করেনি। বরং যার যার উপসনালয়ে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের ইখতিয়ার দিয়েছে। খ্রিষ্টানকে খ্রিষ্টান হিসেবে বেঁচে থাকার, ইহুদীকে ইহুদী হিসেবে জীবন যাপন করার পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। তবে সত্যের প্রচার-প্রসার তো কারো ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ নয়। একজন মুসলিমকে অন্যায় হত্যা যেমন হারাম একজন অমুসলিমকেও বিনা কারনে হত্যা করা নাজায়েয। নবীজী বলেছেন, যে কোন চুক্তিবদ্ধ যিম্মীকে অন্যায়ভাবে হত্যা করল সে আমাদের দলভুক্ত নয়।
অবর্তমান বিশ্বে পূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্র না থাকলেও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে মুসলিমরা যতটা না নিরাপদ তার চেয়ে বেশি অমুসলিমরা নিরাপদ। মুসলিম রাষ্ট্রগুলো তাদেরকে পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পূর্ণ অধিকারে সচেষ্ট থাকাছে। বিপরীতে মুসলিমরা অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে তাদের পূর্ণ অধিকার ও স্বাধীনতা পাচ্ছেনা। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নিধন, উহঘুরের নির্যাতিত মুসলিম ভাই-বোনেরা, ভারতে নিপীড়িত মুসলিমরা এবং গাজার ক্ষুধার্ত ও নির্যাতিত মুসলিমরাই এর জ্বলন্ত প্রমাণ।
ইসলাম মানবতার যে দৃষ্টান্ত পেশ করেছে, পৃথিবীর কোন জাতি, কোন ধর্ম, কোন সংঘ আজ অব্দি এরূপ দৃষ্টান্ত পেশ করতে পারেনি। এক গাজা ইস্যুতেই পশ্চিমাদের তথাকথিত মানবতা প্রশ্নবিদ্ধ। এর জন্য অন্য কোন দৃষ্টান্তের প্রয়োজন নেই।
সুতরাং ইসলাম মানব জাতিকে কী দিয়েছে এ প্রশ্নে না জড়িয়ে পশ্চিমাদের তথাকথিত মানবতা মানবতার কী ক্ষতি করেছে সেটাই এখন আলোচনার বিষয় হোক।
আশা করি, ইনশাআল্লাহ, গাজা স্বাধীন হবে। ইসলামি মানবতা ফিরে আসবে। পশ্চিমাদের তথাকথিত মানবতার ভরাডুবি হবে।
0 মন্তব্য রয়েছে