অদৃশ্য শক্তি
পৃথিবীর প্রতিটি বিপ্লব বা জাগরণ কোন না কোন চিন্তার ফসলা নির্ধারিত একটি চিন্তাকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্মে তৈরি হয়। যা পরবর্তীতে সফলতাকে টেনে নিয়ে আসে।
অন্তরের শক্তি
বিশ্বাস পৃথিবীতে এমন এক জড়োহাওয়া যখন কোন জাতির উপর দিয়ে তা প্রবাহিত হয় তখন তাদের জীবনের গতিধারা কে পাল্টে দেয় মানুষের রক্তে রক্ত রক্তে তৈরি করে দেয় উন্নতি ও অগ্রগতির স্নেহা। যা দিয়ে তারা জয় করে প্রান্তরের পর প্রান্তর। আবিষ্কার করে আকাশ মহাকাশের গ্রহ পুঞ্জি। তবে সব কিছুর পিছনে থাকে মানব জীবনের বিশেষ কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। যেমন মানবতার মুক্তি ব্যক্তি সমাজ রাষ্ট্রকে শৃঙ্খলা বদ্ধ করা, ও মানুষের মৌলিক অধিকারকে নিশ্চিত করা।
চিন্তা গোটা মানবজাতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। যার ফলে চিন্তা হতে হবে পরিমার্জিত ও নিপুন। কেননা চিন্তার মাঝে তিনটি মহৎ গুণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য তবেই সে চিন্তা করে আনতে পারবে মানব জীবনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য।
১/ উদ্দেশ্য হতে হবে মহৎ
২/ উপায়- উপকরণ হতে হবে মহৎ
৩/ নীতি-নৈতিক হতে হবে মহৎ
কারণ মানব জীবনের পেছনে রয়েছে দায়িত্ব ও কর্তব্যের মহা ফিরিস্তি।
চিন্তার কেন্দ্র
সকল আলেম গবেষক পন্ডিত এই বিষয়ে একমত যে, চিন্তার কেন্দ্র বিন্দু হল শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনা যুগ যুগ ধরে প্রমাণিত হয়েছে যে উন্নতির বাহক হল শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনা। একটি প্রকৃত সত্য ও যুগান্তরের বাস্তবতা।
শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গনার প্রকার:-
বাস্তবতার নিরিক্ষে এই কথা বলা যেতে পারে শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন দুই প্রকারের বিভক্ত
১/ মানব রচিত
২/ ওহি ভিত্তিক বা ঐশি প্রদত্ত
*মানব রচিত
মানব রচিত শিক্ষা ব্যবস্থা এক আপেক্ষিক নীতি গোত্র বা বিশেষ শ্রেণীর মানুষের জন্য উন্মুক্ত হতে পারে। সমগ্র জাতির জন্য স্থায়ীভাবে কোন কাজ করেনা। কারণ তার মাঝে উল্লেখিত মহৎ গুণসমূহ নিশ্চিত করা হয়না।
কোন সম্প্রদায় হয়তো নিজেদের দাবি পূরণে কিছুটা নীতি গ্রহণ করতে পারে, যা অন্য সম্প্রদায়ের চাহিদা ও দাবি পূরণ মেটাতে অক্ষম। যা জলন্ত প্রমান হলো গ্ৰীক সভ্যতা। এক সময় তার সুনাম ও সুখ্যাতি ছড়িয়েছিল পৃথিবীর আনাচে কানাচে। তবে সময়ের জাতাতকালে নিস্লেষিত হয়ে গেছে তার প্রতিটি অস্তিত্ব। পরিনত হয়ে গেছে যাদুঘরের নির্দেশে।
বর্তমান মানব রচিত শিক্ষাব্যবস্থার একই পরিনতি।
কিছু গবেষণা থাকলেও নীতি নৈতিকতা ও আদর্শের ধরা ছোঁয়া বলতে কিছুই নেই।
মানব রচিত শিক্ষা ব্যবস্থা গুলো ভোগবাদী ও স্বার্থ বাদীর হওয়ায় সবাই স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়। বর্তমান ইউরোপ আমেরিকা তার জ্বলন্ত প্রমাণ করে। কেননা সেথায় মানুষের নৈতিক উন্নয়ন সাধন না হওয়ায় প্রাণহানি ও আত্মহত্যার হার বেড়েই চলেছে। এক খ্রিস্টান বালক উস্তাদ নোমান আলী খানকে জিজ্ঞেস করেছিল, ওস্তাদ আমি আমার জীবনের কোন স্বাদ পাচ্ছিনা, বরং সুইসাইডকেই একমাত্র সমাধান মনে করছি। জীবনের প্রতিটি কোনায় পছন্দ করেছে আশার বাতি নিভে গেছে।
একটু ভাবুন একজন বালের তো তখনই এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে যখন নীতি নৈতিকতার চূড়ান্ত পর্যায়ের অধঃপতন ঘটে এটাই চিরচারীত সত্য ও কালান্তরের বাস্তবতা।
*ওহি ভিত্তিক শিক্ষা
মানবজাতি এমন কিছু সত্তার সমষ্টি, যারা কখনোই স্বভাবজাত ও প্রকৃতির সীমানা ভেদ করতে পারে না। তাই তাদের প্রয়োজন হল এমন কিছু নীতিমালা,যা হবে সর্বজনীন ও স্থায়ী। ফলে স্রষ্টায় পারে মানুষের মাঝে সে সব নীতিমালা ফেরত করতে। যা তাদের মন মননকে নিয়ন্ত্রণ করবে। ইসলাম আবাদের কাছে যুগ যুগ ধরে তাই প্রমাণ করছে। রাসুল (সা:) ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে নবুওয়াত লাভ করেন। মাত্র ৪০ বছরে ইসলামী রাষ্ট্রের পরিধি দাঁড়ায় এক কোটি 30 লাখ বর্গমাইল। পৃথিবীতে আর কোন সভ্যতা এত দ্রুত সম্প্রসারণ হয়নি। কিসের শক্তিতে ইসলামী সভ্যতা এত দ্রুত বিস্তার লাভ করছে।
অবশ্যই ভাবনার বিষয়। হৃদয়ের তরবারি দিয়ে জয় করে ফেলেছে মানুষের মন মননকে। রাষ্ট্র সম্প্রসারণ ব্যক্তি গঠন সমাজ ও রাষ্ট্রসংস্কার বিনির্মাণ, শিক্ষার বিস্তার, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, যুদ্ধনীতি, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, শিক্ষা সংকলন, হাদিস সংকলন ও আধ্যাত্মিক চর্চা সবকিছু একসাথে সংগ্রহ করেছ। যেমন কারেন্ট একসাথে সব জায়গায় কাজ করে, একই সাথে ফ্যান, লাইট, ফ্রিজ, এসি, এয়ার কোলার ঘড়ি চলছে। তাই সূর্য যখন উঠে সবদিক থেকেই আধার পালায়।
প্রবাস কারলাইনের একটি বক্তব্য ছিল hero and heroes worship(বীর এবং বীরপূজা) এই ধারাবাহিক বক্তব্যে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম প্রসঙ্গে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে আলোচনা করেছেন। ইউরোপীয়দের থেকে আসা প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কর্ম পন্থার বাস্তবতা ও সর্বজনীনতা তার কাছে সুষ্ঠু ছিল।
যৌথ শিক্ষার কার্যক্রম:-
পৃথিবীর বুকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম প্রথম যৌথ শিক্ষার কার্যক্রম শুরু করেন। প্রথমে মক্কায় যা ইতিহাসের দারুল আরকান নামে পরিচিত, পরবর্তীতে মদিনায় যা ইতিহাসের দ্বারে সুফ্ফাহ নামে পরিচিত।
jeek goody (তিনি Cambridge university এর শিক্ষক ছিলেন) তিনি তার বই (the chef of history) যে শিক্ষার সূচনা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম থেকে শুরু হওয়াকে প্রমাণ করেছেন। ইউরোপীয়দের অসার ও অলীক দাবি সমূহকে সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণ করেছেন। তাই তো তার বইয়ের নাম (ইতিহাস চুরি)
এমনকি ইউনিভার্সিটি কেন্দ্রিক যে পড়াশোনার ধারা চালু হয়েছে,তা মূলত মুসলমানদের আবিষ্কার। তা হলো জামিয়া কারাবিয়্যান যা ক্ষরবেকার রাজধানীক শহরের পাসে অবস্থিত। রুশ প্রাচ্যবীদ জোসি অর্ধযুগ আগেই লিখেছেন। বিশ্বের প্রাচীনতম ইউনিভার্সিটি ইউরোপে নয়, বরং ক্ষরবেকার রাজধানীর শহরের ফাসে অবস্থিত।
প্রফেসর রম.ল্যান্ড (rom landay) বলেন, ফাস শহরে আদিকাল থেকেই জামিয়া কারাবিয়্যান প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় (জামিউল কারাবিয়্যান ১/১১২)
যা থেকে এই প্রতিমান হয় যে, ওহি ভিত্তিক শিক্ষা এমন এক অদৃশ্য শক্তি যা মানব জীবনের সকল সংকটকে একসাথে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম। সাথে সাথে মানুষের সাথে ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম।
তাই মানব সভ্যতার উত্থান ঘটাতে হলে ওহীভিত্তিক শিক্ষার বিকল্প নেই।
ইতিহাস যার চূড়ান্ত ফয়সালা যুগের পরে যুগ করেই আসছে। তাই ওহীভিত্তিক শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া ছাড়া, অন্য কোন মানব রচিত শিক্ষা ব্যবস্থার দ্বারা ইনসাফ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখায় হলো বামন হয়ে চাঁদ ছোঁয়ার নামান্তর।

0 মন্তব্য রয়েছে