সাহস বনাম বাঙালী
এক সময় বাঙালী বললে মানসপটে ভেসে উঠত এক সাহসী তরুণের ছবি। বিদগ্ধ কিছু যুবকের দৃশ্য। যারা ছিল অসীম সাহসের আধিকারী। ধ্যানে-জ্ঞানে সমৃদ্ধ এক সুসংহত জাতি। যাদের ছিল না কোনো কামান, ছিল না বিশাল নৌবহর, ছিল না কোনো আধুনিকতার ঋদ্ধ হাতে তৈরি যুদ্ধ সরঞ্জাম। ছিল শুধুই সাহসী হুংকার, বীরত্বের গর্জন সাথে কিছু রাইফেল। এতেই পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী লেজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল।
অথচ তাদের ছিল বিপুল সৈন্যের পাশাপাশি আধুনিক যুদ্ধচালনা শক্তি। তাছাড়া তারা এদেশের সন্তানদের অজেয় সাহস আর বীরত্ব দেখে বারবার অবাক হতে বাধ্য হয়েছে। এতে করে তাদের কাছে বাঙালী একটা ভীতিব্যঞ্জক নামে পরিণত হয়েছিল।
এরাই তো বাঙালী। এদের জন্যই তো এ বাংলার প্রসব ঘটেছে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ফুটেছিল বাংলার ফুলকলিটি। যার মাটি সিক্ত হয়েছিল তাদেরই রক্তে। পরিণামে সেটি স্বাধীনতার মুখ দেখেছিল ৭১-ই।
বাংলার প্রতিটি ঘরে এমন শিশুরই জন্ম কাম্য; কারণ, তারা তো সেই বীরদেরই সন্তান, তাদেরই রক্তের বিচ্ছুরণ। কিন্তু আমাদের কী হলো আজ? আমরা কেন ভীতু? সাহসে, মনোবলে কেন আমরা এত দুর্বল? বীরত্বের প্রশ্নে কেন এত পিছিয়ে এখন?!!
* পশ্চিমা সভ্যতা আজ আমাদের গ্রাস করে ফেলেছে। নৃশংস মানবতার গ্লানি ধীরে ধীরে আমাদের নীতি-নৈতিকতায় চির ধরিয়ে দিয়েছে। তাদের সভ্যতার অনুসরণের মধ্য দিয়ে আমাদের চারিত্রিক অবক্ষয় ঘটেছে। ফিকে হয়ে যাচ্ছে আমাদের সভ্যতা। যেন আমরা তা ভুলতে বসেছি।
বস্তুত তারা হচ্ছে একেকটা ভীতুর ডিম। ভয়কে জয় করতে তারা শেখেনি। দেখেনি আদৌ বীরত্ব গাঁথা প্রহররাজি। তাই তাদের রন্ধ্রে সাহসের বিন্দু পাওয়াও দুস্কর। যার কারণে, "পুঁজিবাদ" ইউরোপীয় শিল্প বিপ্লবের পর তারা পুঁজিবাদের অবাধ চর্চা শুরু করে। যার হিংস্র থাবা তাদের সামাজিক অবকাঠামোতে এবং চরিত্রে ধস নামিয়ে আনে। ধীরে ধীরে তারা সামাজিক শক্তি হারিয়ে ফেলে। এর মধ্য দিয়ে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ভাবেও এর শিকার হয়ে পড়ে।
তো কথা হল, দুর্দশাগ্রস্থ এমন এক জাতির অনুসরণে না আছে কোন কল্যাণ, না আছে কোন ধীমানের পরিচয়। আছে শুধুই বোকামি আর নির্বুদ্ধিতা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, কিছু আগাছা বাঙালী সর্বনাশী এসব সভ্যতা আমাদের দেশে টেনে আনছে। আমাদের সমাজে তা চরিতার্থ করতে উস্কে দিচ্ছে ক্ষমতাধারী পাষণ্ডদের। যৌবন উন্মাদনায় মত্ত যুবক-যুবতীদের তেলিয়ে দিচ্ছে তার সজ্জা গ্রহণে।
ফলে তারাও এখন বস্তুবাদী। বস্তুর চাকচিক্যে তারা বিমোহিত। তাদের ছাঁছে নিজেদের মন-মগজ ভোঁতা করে তুলেছে। নিজেদের চিন্তাশীল মন-মননকে ধূর্ত করে ফেলেছে। তাই বলি, অনুসারীরা অনুমৃতদের মতো হবে না তো কী হবে?!!
অন্যদিকে তারা ইসলামের পূর্ণাঙ্গতার ব্যাপারে অজ্ঞ। সবক্ষেত্রেই যে ইসলাম শাশ্বত সমাধান দিয়েছে, তা তাদের সামনে অস্পষ্ট। যার দরুণ, ভূস্বর্গের সৌন্দর্য আর সৌকর্যের প্রতিই তারা আকৃষ্ট।
এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হল, তাদেরকে "ইসলাম" বুঝানো। ইসলামের সকল দিক তাদের সামনে খোলাসা করা। দাওয়াতের পদ্ধতিতে নতুন সংযোজন-বিয়োজন করে জনসম্মুখে ইসলামকে ফুটিয়ে তুলা। তাহলে—ইনশাআল্লাহ তারা ভিন্ন সব সভ্যতাকে ছুড়ে ফেলে ইসলামি সভ্যতাকে আকড়ে ধরবে এবং ইরানি চেতনা ফিরে পাবে। ফিরে আসবে বীরত্বের দৃশ্যগুলো। শুনতে পাবো সাহসের গল্পগুলো।

0 মন্তব্য রয়েছে