ভাসা ভাষা
ভাষা কাকে বলে?
কথাটা অনেকটা এরকম হয়ে গেছে, ছাতা কাকে বলে?
ছাতা কী জিনিস সেটা আমরা সবাই ভাল করেই জানি। রোদ-বৃষ্টির দিনে ছাতা মাথায় করে চলি। প্রত্যেক ইস্কুলের হেডমাস্টার মশাই আর ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান সাহেবদের জন্য একটা করে ছাতা সর্বদা বরাদ্দ থাকে। ছাতা নিয়ে সাহিত্যভাণ্ডারে আছে বিখ্যাত সব ছড়া-কবিতা।
সুকুমার রায়ের একটা ছড়া হয়ে যাক,
মাসী গো মাসী পাচ্ছে হাসি,
নিম গাছেতে হচ্ছে শিম।
হাতির মাথায় ব্যাঙের ছাতা,
কাগের বাসায় বগের ডিম।
তবুও ছাতার মত বিখ্যাত জিনিসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আমরা নাকাল। ভাষাও এমনই জিনিস। এতটাই খ্যাত যে আর কোনো আখ্যা দেওয়া দায়। ব্যাখ্যা দিতে গেলে কেমন জানি, কাগের বাসায় বগের ডিমের মত হয়ে যায়। যদিও বগ আদৌ কাকের বাসায় ডিম পাড়ে কি না কে জানে। কী উদ্ভট সব কথা! এসব কথা কার মাথায় আসে! কী করেই বা আসে! যাক, ব্যাখ্যা না দেওয়াই ঢের ভাল। মাথার জিনিস মাথায় থাক। বাইরে এসে ঘোঁট না পাকাক।
এইবারে একদল উল্লুক আমাকে তেড়ে এসে ধরবেন, মশাই, এটা কি কোনো মগের মুল্লুক!
-কেন, তা হবে কেন?
-আপনার কথার তো মাথামুণ্ডু কিছুই যে মিলছে না!
-কেন ভাই, মাথা আর মুণ্ডুতে মিল হবে না কেন? মাথা আর মুণ্ডু তো এক জিনিসই।
-আজ্ঞে ভাষা হল মনের ব্যাপার। আর আপনি বলছেন, মাথার ব্যাপার। এ যেন দিন আর রাত, সূর্য আর চন্দ্র, স্বর্গ আর মর্ত্য!
-দিন আর রাত হবে কেন? মাথার বদলি পা বললে নাহয় দিন আর রাতের মত শোনাতো। মন আর মুণ্ডু কি এতটাই প্রান্তিক?
-অত শত বুঝি না মশাই, মনের জিনিস কে আপনি মাথার মধ্যে গুঁজে দিলে চলবে না।
-ও আচ্ছা, আপনি তাহলে পারগেমন গাঁয়ের গ্যালেন মশাইয়ের নাম শোনেন নি, বুঝি?
-তা শুনবো কী করে! তিনি কোন গাঁয়ের পঞ্চায়েত?
-আরে না, তিনি এক মস্ত বৈদ্য। দাওয়াই টাওয়াই বানান।
-ও, তা, ভাল পাঁচন বানাতে জানেন? আমার আবার ইদানিং চুলকোনির সমস্যা। যাই খাই তাতেই এলার্জি।
-তা, আমি আপনার কথা শুনেই বুঝেছি।
-মানে?
-না মানে বলছিলাম, গ্যালেন সাহেব গবেষণা করে দেখিয়েছিলেন, সকল প্রাণীই চিন্তা করে মন দিয়ে নয় বরং মগজ দিয়ে। কথা তো আমরা চিন্তা করেই বলি, তাই না?
-তাই নাকি? এত বড় কোবরেজ বলেছেন, তো তার অবশ্যই কোনো কারণ আছে। কিন্তু আমাদের ইস্কুলের মাস্টার মশায় যে কইতেন, খালি মোটা একটা মাথা থাকলেই চলবেনা, ছোঁকু! পড়াশোনায় মন থাকতি হবে। এজন্যই তো পড়াশোনোটা আর আমার হয় নি। তা কোবরেজ মশাই কী করে জানলেন?
-গবেষণা করে।
-মানে কী?
-গবেষণা মানে গোরু অনুসন্ধান। তিনি একটা গোরুর মাথার খুলি খুলে ওতে তার গুঁতিয়ে গুঁতিয়ে দেখেছিলেন। গুঁতোলেই গোরুটা হাম্বা হাম্বা করছিল আর মগজের একেক জায়গায় গুঁতোলে একেকটা অঙ্গ যেমন, চোখ, কান, ল্যাজ, ঠ্যাং নাড়াচ্ছিল। সেই থেকে তিনি বুঝলেন মন নয় বরং মগজ দিয়েই সব কিছু চলে। বুঝলেন?
-মশাই, মুখ্খু মানুষ পেয়ে আমার সাথে কি মশকরা করছেন?
-আরে মশকরা করতে যাবো কেন? আমাকে কি দেখলে সঙ মনে হয়?
-না, আপনার কথার ভাবভঙ্গি থেকে তাই মনে হয়। যাকগে, আমি যাই। চক্কত্তি বাড়ি যেতি হবে ধান কাটতে। গোরুগুলোরেও স্নান করাতে হবে বেলা থাকতে।
প্রিয় পাঠক, আশা করি, ভাষা কী জিনিস তার একটা ক্ষুদ্র ধারণা আমি আপনাদের দিতে পারছি। গ্রীক দেশের পারগেমন গাঁয়ের গ্যালেন সাহেব আসলেই এইরকম একটা এক্সপেরিমেন্ট করেছিলেন। যেখান থেকে আমরা ধরে নিই যে, হয়ত মানুষ মাথা থেকেই চিন্তা করে। পরে অবশ্য অনেক বিজ্ঞানীর যুক্তি আর গবেষণা দিয়ে সেটা আরও শক্তপোক্তভাবে প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন আর শক্তিশালী গবেষণা হল, আলোকবিজ্ঞানের জন্য মুসলমান বিজ্ঞানী হাসান ইবনে হায়সাম(ওরফে আল হাযেন) এর বিখ্যাত চক্ষুবিষয়ক গবেষণা। যাক, গ্যালেন আর হাসান সাহেবদের কথা আরেকদিন হবে।
0 মন্তব্য রয়েছে