ভাসা ভাষা পর্ব ২
আমরা চিন্তা করে যাই প্রকাশ করি তা-ই ভাষা। একবার একখানা চিন্তা করতে আমাদের চর্বি দিয়ে বানানো জিলিপির প্যাঁচ দিয়ে ভরা মগজখানার ভেতর খেলে যায় নানান রকম রাসায়নিক ক্রিয়া বিক্রিয়া। মানুষের মগজের নকশা বড় জটিল। তাই তার ভাষাও জটিল। কর্মকাণ্ডও জটিল। মানুষের কর্মকাণ্ড সবই আসলে ভাষা! এজন্য ভাষার রয়েছে অনেক অনেক প্রকার- বডি ল্যাংগুয়েজ(অঙ্গের ভাষা), সাইন ল্যাংগুয়েজ(ইশারার ভাষা), স্পোকেন ল্যাংগুয়েজ(কথ্য ভাষা)...
আবার আরেক বেবুন এসে আমাকে ধরবেন, পশুপাখির মগজ নেই, মশাই? তারা কেন কথা বলে না?
-আহা, বেবুন মশাই, ওই বিষয়টা তো দ্বিতীয় পর্বের জন্য তুলে রেখেছি। ওখানে আমি দেখাবো কোন কোন প্রাণী কথা বলতে পারে আর কীরকম পারে। আপনি এখন ফুটুন। আরেকজনকে কথা বলার জন্য সুযোগ করে দিন।
আরেকজন গোবিন এসে বললেন, হুনছি, মানুষ আজীবন মগজের দশ পার্সেন্টও কাজে লাগাইতে পারে না। ১০০ পার্সেন্ট মগজরে কাজে লাগাইছিল ইহুদি বিজ্ঞানী আইন্সটাইন। আইন্সটাইন কি মানুষ ছিল নাকি ভীনগ্রহের এলিয়েন? এইসব ইহুদিদের ষড়যন্ত্র! ওরা এলিয়েনরে ইহুদি কইরা জায়োনিস্ট গো পক্ষে কাজে লাগাইছে! এইডা অন্যায়।
-মশাই, ১০০ পার্সেন্ট মগজ আমরা সবাই ব্যবহার করি। মনস্তাস্ত্বিক গর্ডন সাহেব এই কথাই বলেছেন। সুতরাং আপনার পক্ষেও আইনস্টাইন হওয়া তেমন কঠিন কিছু না। বরং আইনস্টাইনের চাইতেও মেধাবী অনেক মানুষ জগতে জন্মেছিল এবং জন্মাবেন।
আরেকজন বিশালদেহী ওরাংওটান আমাকে জেঁকে ধরলেন, মশাই, আপনি বললেন, মানুষের চর্বি মগজ দিয়ে বানানো। থুড়ি, মগজ চর্বি দিয়ে বানানো। তাহলে আমাকে সবাই কেন চর্বি খেতে নিষেধ করে?
-মশাই, এটা অপ্রাসংগিক বিষয়। তবে চর্বি খেলে আপনার মগজ বেশি কাজ করবে।
আরেকজন শিম্পাঞ্জি উড়ে এসে আমার মাথায় পড়ল, মশাই, এই তো আপনাকে পেয়েছি। আপনি বলেছেন, মানুষের মগজে নাকি জিলিপির প্যাঁচ। বলুন, এত প্যাঁচ দিয়ে মানুষ চিন্তা করে কী করে?
-আপনার জিজ্ঞাসা অত্যন্ত সুন্দর। তবে মশাই, আপনি আগে আমার মাথা থেকে নামুন।
-মশাই, আপনি না বলা পর্যন্ত আমি আর নামছি না।
-এতো একেবারে বেতাল পঞ্চবিংশতি হয়ে যাবে!
-কী বললেন?
-না, না, পঞ্চবিংশতি হবে কেন? অতগুলো গল্প আর কুইজ শোনার ক্ষমতা আমার নাই। আমি তো আর বিদ্যাসাগর নই। তা শিম্পাঞ্জি মশাই, আপনি কি সুকুমার রায়ের অবাক জলপান পড়েন নি?
-তা আমি পড়বো কোত্থেকে, আমি কি ইস্কুলে পড়েছি?
-আচ্ছা, আমিই বলছি। গল্পটা হলো, এক পথিক গেছে ভ্রমণে। ভীনগাঁয়ে গিয়ে তার খুব জলের তেষ্টা পেল। এখন জল পাওয়া যায় কই? পথিক পড়লেন বিপাকে। সেই গল্পখানা শুনলে আপনার কাছে রসিকতা মনে হতে পারে। তবে মানুষের মগজে যে কত শত জটপ্যাঁচ তা কিছুটা বুঝতে পারবেন। গল্পটা হল এই,
পথিকঃ মশাই, একটু জল পাই কোথায় বলতে পারেন?
ঝুড়িওয়ালাঃ জলপাই? জলপাই এখন কোথায় পাবেন? এ ত জলপাইয়ের সময় নয়। পাকা বড়ই নিতে চান দিতে পারি‒
পথিকঃ না না, আমি তা বলিনি‒
ঝুড়িওয়ালাঃ না, পাকা বড়ই আপনি বলেননি, কিন্তু জলপাই চাচ্ছিলেন কিনা, তা ত আর এখন পাওয়া যাবে না, তাই বলছিলুম‒
পথিকঃ নাহ্ মশাই, আমি জলপাই চাচ্ছিনে‒
ঝুড়িওয়ালাঃ চাচ্ছেন না ত 'কোথায় পাব' 'কোথায় পাব' কচ্ছেন কেন? খামকা এরকম করবার মানে কি?
পথিকঃ আপনি ভুল বুঝেছেন‒ আমি জল চাচ্ছিলাম‒
ঝুড়িওয়ালাঃ জল চাচ্ছেন তো 'জল' বললেই হয়‒ 'জলপাই' বলবার দরকার কি? জল আর জলপাই কি এক হল? আলু আর আলুবোখরা কি সমান? মাছও যা মাছরাঙাও তাই? বরকে কি আপনি বরকন্দাজ বলেন? চাল কিনতে এসে চালতার খোঁজ করেন?
পথিকঃ ঘাট হয়েছে মশাই। আপনার সঙ্গে কথা বলাই আমার অন্যায় হয়েছে।
ঝুড়িওয়ালাঃ অন্যায় তো হয়েছেই। দেখছেন ঝুড়ি নিয়ে যাচ্ছি‒ তবে জলই বা চাচ্ছেন কেন? ঝুড়িতে করে কি জল নেয়? লোকের সঙ্গে কথা কইতে গেলে একটু বিবেচনা করে বলতে হয়।
দেখুন, এই গল্পের প্রথম জায়গাটা হল, মাত্রার হের ফের। ‘জল পাই’ আর ‘জলপাই’। অথচ মাত্রার হেরফের কথা বলার সময় ধরার কোনো উপায় নেই। ইচ্ছা ছিল, এ সংক্রান্ত আরও কিছু উদাহরণ টানবো। কিন্তু থাক অনেক বেশি বকা হয়ে যাচ্ছে।
যাক.. .পুরো গল্পটা আশা করি জোগাড় করে পড়ে ফেলবেন। ততক্ষণে আমিও কেটে পড়ি। আগামী পর্বে দেখা হবে ক্ষণ। এখানেই রাখি।
0 মন্তব্য রয়েছে