এক স্বৈরাচারীর পতন ও স্বাধীনতার বার্তার উদয় উপাখ্যান
মুহা: উবায়দুল্লাহ ফারুক
বিঃ দ্রঃ এই নিবন্ধের কথাগুলো কেবলই লেখকের নিজস্ব মতের প্রতিফলন করে। এর কোনো উক্তি স্বাধীনতার বার্তার স্বাধীন চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক মনে হলে আমাদের জানান। লেখাটি দ্রুত অপসারণ করা হবে।
শেখ হাসিনা। বাংলার ইতিহাসে রক্তপিপাসু স্বৈরাচারী এক দাপুটে সরকার। ক্ষমতার প্রতাপ, হুমকি-ধমকি আর অর্থের গরম দেখিয়ে দীর্ঘ পনেরটি বছর রুদ্ধ করে রেখেছিল অসহায়, নিঃস নিরিহ মানুষের জনজীবন। বন্ধ করে দিয়েছিল বক্তার বাকশক্তি। থামিয়ে দিয়েছিল লিখিয়ের লেখা। ছিনিয়ে নিয়েছিল অনাহারির আহার। ভুয়া দাপট আর গুম-খুনকে পুঁজি করে রাজত্বের শাহী মসনদ করে তুলেছিল বেশ পাকাপোক্ত। নিরাপরাধ হতদরিদ্র মানুষগুলোর কঙ্কালের ওপর তুলে দিয়েছিল চরম ঔদ্ধত্য আর অন্যায়ের স্টীম রোলার। কিন্তু, অদৃশ্য শক্তির কি এক অগ্নিঝরা বাতাস পুড়িয়ে দিল সেই রাজপ্রাসাদ। মুহূতেই উপড়ে ফেললো দীর্ঘ ১৫ বছরের লালিত সেই শত্রু দুর্গটি। জেনে নিন সেই ক্ষুদ্র -উপাখ্যান:-
জুনের প্রথম দিন। শুরু হলো কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বেশ শান্তশিষ্ট দিন। কিন্তু আওয়ামী লীগের আনাড়িদের মুখে আনাড়ি কিছু বাক্যে ছাত্রদের ক্রোধ বিস্তারিত হয়ে উঠলো। আন্দোলনের গতি ক্রমশ চরমে গিয়ে ঠেকেলো। আওয়ামীলীগ সেক্রেটারি উবায়দুল কাদের বিদ্রুপের হাসি এসে সাংবাদিক সম্মেলনে বলে বসলো, তোমাদের সব আশার গুড়ে বালি। তোমাদের শায়েস্তা করতে আমার ছাত্রলীগই যথেষ্ট। ওইদিকে মানুষ নামে বহুরূপী ডাইনি ও অবজ্ঞার সুরে মুখ ফুঁসলে বলে ফেলল -সব মেধাবী কি ওই রাজাকারের বাচ্চারা। দাবানল হয়ে ছড়িয়ে পড়ল এ খবর দেশজুড়ে। রাতভর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো স্লোগানে করতে লাগলো আমি কে? তুমি কে? রাজাকার রাজাকার...
হ্যাঁ ঠিক পরের দিনটিই ছিল ১৩ জুলাই মঙ্গলবার। চশমখোর পোষ্য পুলিশের গুলিতে আন্দোলনের ১ম শহীদ, বেগম রোকেয়া কলেজের বীর আবু সাঈদ চলে গেলেন স্রষ্টার সান্নিধ্যে। আন্দোলন তখন তুঙ্গে উঠেছে। দেশময় সুখ আর বিদ্রোহের বাতাস বইছে। একে একে রক্তের আকারে রঞ্জিত হচ্ছে ইতিহাসের নব্য পাতাগুলো। রাজধানী ঢাকা পুরোটাই অচল। পুরো দেশ থেকে আলাদা। নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন। লাশের হিড়িক পড়েছে মেডিকেল মৃত্যুপরিতে। স্বজনরা বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়লো। জুলাই পেড়িয়ে অক্টোবরের ৪ তারিখ। আন্দোলন তখন নতুন মোড় নিল, ঘোষিত হল ‘মার্চ টু ঢাকা’ এখন শুধু এক দফা এক দাবি,-
‘গদি ছাড় স্বৈরাচার’ সারা দেশে কারফিউ চলছে, কিন্তু কেউ শুনে কার কথা?
কথায় আছে
হৃদয়ে যদি বিপ্লবের বাঁশি বাজে,
তবে ভয় থাকে না, যে হাতে বাঁশ নিয়ে চলে।
রক্ত আর রক্তের স্রোত বয়ে গেল ৪ই অক্টোবর সেই দিনটিতে। দলীয় ক্যাডার উঠতি থেকে পাতি কি কি সব মাস্তানের হাতে অস্ত্র, কোন বাধা নেই, নেই কোন ওয়ারেন্ট আর মামলা। পাখির মত গুলি করে মারা হচ্ছিল নিরীহ নিরস্র ছাত্রজনতাকে । পশ্চিম আকাশে সূর্যাস্ত দিয়েছে অনেক আগেই। রাতের আঁধার নেমেছে, এদিকে বিপ্লবী বীরেরা ঢাকায় সমাগম শুরু করেছে। পরের দিন ৫ই অক্টোবর আধো হাসি কান্না নিয়ে খুব আকাশে একরাশ ক্লান্তির ছাপিয়ে উদয় ঘটলো সূর্যটির। শুধু শাহবাগ চত্বর এই কয়েক লাখ জনতার ভীড়।
ওদিকে তিন বাহিনীর প্রধানসহ আই.জি.পি.কে নিয়ে চলছে গণভবনের সকাল সকাল রুদ্ধদ্বার বৈঠক, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে গতরাতেই কতক নেতা সেন হাতে ক্ষমতা স্থানান্তরের আবেদন করেছে। কিন্তু ক্ষমতার ক্লিপেয়ার রুদ্ধ নারী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। ধমকিয়ে নেতাদের বিদায় জানালো। এই সংকর তার তিন বাহিনীর সামনে দিবে, এত এত আশা নিয়ে শুরু হলো বৈঠক। কিন্তু তার সে আশায় যে কত আগেই ছেদ করেছে ,সময় যে তার পুড়িয়ে এসেছে, সে খবরও নেই তার।
গম্ভীর কণ্ঠে সোজা সাপ্টা বক্তব্য সেনাপ্রধান অকারুজ্জামানের:- সেনাবাহিনী আর এক মুহূর্ত আপনার সহযোগিতা করবে না। ছাত্র-জনতার রক্তের বলি আর নয়। বাংলার এক ছাত্রের জীবন লাখো মুজিবের চেয়ে দামী। ৪৫ মিনিট সময় আপনার হয়তো বাংলাদেশকে বিদায় নয়তো এ ধরা……আবেদন আসলো লন্ডন থেকে খোকা জয়েরও।
দুপুর ০২টা বাজে পরাজয়ের গ্লানি বুকে নিয়ে সর্বহারা কাঙ্গালের নেয় হতচকিত সব ফেলে গা ঢাকা দিল -ভারতের ত্রিপুরা হয়ে দিল্লিতে, দীর্ঘ ১৫ টি বছর পর সস্তি দিল-মা মাটি ও দেশের মানুষকে দীর্ঘ অমানিশা চাপিয়ে পুবাকাশে নতুন রবির উদয় ঘটলো। স্বাধীনতার দীপ্ত সূর্যের জমকালো আলোকচ্ছটায় ঝলমল করতে লাগলো ৩৬ জুলাই সেই প্রভাত। ফুটে উঠল সকালের মুখে এক টুকরো স্নিগ্ধ হাসি। এ হাসি ফসলের হাসি, এ হাসি প্রাপ্তির হাসি।
স্বাধীন দেশের
স্বাধীন নাগরিক আমি
কে ঠেকাতো আমায়?
ছিল এক রাক্ষসী নারী
তবে সেও এখন নাই।
0 মন্তব্য রয়েছে